Monday, December 1, 2025

বিরাট কোহলির বিদায়: এক অধ্যায়ের সমাপ্তি, রেখে গেলেন প্রশ্নের রেশ

Share

বিরাট কোহলির বিদায়!

ভারতীয় ক্রিকেটে বিরাট কোহলির আগমন হয়েছিল বিস্ময় হিসেবে নয়, বরং প্রতিভাবান এক তরুণ হিসেবে। ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছিলেন ক্রিকেট দুনিয়ায়। সেই শুরু, আর তার পরের গল্পটা ইতিহাস।

সচিন তেন্ডুলকরের অবসরের পর যখন গোটা দেশ ভাবছিল কে পূরণ করবে তাঁর শূন্যস্থান, তখন দিল্লির এক যুবক সেই দায় কাঁধে তুলে নেন। কোহলি শুধু সেই শূন্যস্থান পূরণই করেননি, বরং নিজেই হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নতুন স্তম্ভ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও যেন একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেন।

তবে কোনও গল্পই চিরকাল চলে না। সোমবার, ১২ মে, কোহলি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে সেই গল্পের ইতি টানলেন। ব্যাট হাতে ১২৩টি টেস্টে ৯২৩০ রান, গড় ৪৬.৮৫, ৩০টি শতরান আর ৩১টি অর্ধশতরান—সংখ্যাগুলো নিজেই বলে দেয় তিনি কী ছিলেন।

তবু প্রশ্ন থেকে যায়। আরও কিছুদিন খেললে কী ক্ষতি হত? ৩৬ বছর বয়সেই কি থামতে হয়? চোখে-মুখে লড়াইয়ের ছাপ, অথচ অফ স্টাম্পের বাইরের বলগুলো নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। হ্যাঁ, একটা সময় ফর্মে ছিলেন না। কিন্তু এ তো কোহলি! যিনি অফ ফর্মে থেকেও প্রতিপক্ষের হৃদকম্প বাড়াতে পারতেন।

ক্রিকেটে কোহলির নিষ্ঠা ছিল অনবদ্য। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে বাড়ির উঠোনে খেলা, তারপর কোচ রাজকুমার শর্মার তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠা—সবই যেন একটা দৃষ্টান্ত। প্রিয় ছোলে-বাটুরে কিংবা বাটার চিকেনের মতো খাবারও ছেড়েছেন ফিটনেসের জন্য। একবার বলেছিলেন, ‘এক দিনের জন্য ছাড় পেলেও নিয়ম ভাঙব না, কারণ পরের দিন অতিরিক্ত এক ঘণ্টা ট্রেনিং করা কঠিন হয়ে যায়।’

ফিটনেস, অনুশীলন আর পারফরম্যান্স—এই ত্রয়ীর ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছিলেন নিজের ব্র্যান্ড। সতীর্থদের আগ্রহিত করতেন উদাহরণ হয়ে, প্রতিপক্ষের আগ্রাসন রুখতেন নিজের আগ্রাসনে। ভারতীয় ক্রিকেটে এমন নিবেদিতপ্রাণ খেলোয়াড় খুব কমই এসেছেন।

অধিনায়ক হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরেছেন অসামান্য ভাবে। ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত টানা তিন বছর ভারত ছিল বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল। পরিসংখ্যানই তাঁর সাফল্যের প্রমাণ। ম্যাচের পর ম্যাচ দলকে টানার পাশাপাশি, ড্রেসিংরুমে ছিলেন অভিভাবকের মতো।

অবসর নিয়ে ফেললেন টি-টোয়েন্টির পর এবার টেস্ট থেকেও। রইল কেবল একদিনের ক্রিকেট। হয়তো আর কিছু দিন খেলতে পারতেন, কিন্তু বড় খেলোয়াড়েরা জানেন, কখন থামতে হয়। তবুও মনে হয়, একটা উত্তর যেন রেখে গেলেন—ঠিক কেন এখন?

তাঁর ক্রিকেট-জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল অধ্যবসায়ের গল্প। যে গল্প শেষ হল একরকম ছোটগল্পের মতো—সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই। তবে একথা নিশ্চিত, ভারতীয় ক্রিকেটে কোহলির দেওয়া উত্তরগুলো ছোট নয়। তাঁর অবদান যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে এই দেশ।

সাইবার অপরাধ সচেতনতা: ছাত্রদের জন্য ‘সহজ পাঠ’ প্রশিক্ষণ

Read more

Local News