Thursday, January 30, 2025

সমুদ্রের ঘোলা জলে ডোবার ভয়ে জুজু! তাইওয়ান নিয়ে গর্জন করেও সংকটে শি জিনপিং

Share

তাইওয়ান নিয়ে গর্জন

তাইওয়ান দখলের হুমকি আবারও শোনা গেল চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মুখে। তবে মলাক্কা প্রণালীর কৌশলগত জটিলতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিরোধের কারণে এ হুমকি বাস্তবে রূপ নিতে পারছে না। প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে চিনের নজরে। কিন্তু তাইওয়ান নিয়ে বেজিংয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার কৌশলগত সংকট।

মলাক্কা প্রণালীর গুরুত্ব ও সংকট

মলাক্কা প্রণালী দক্ষিণ চিন সাগর এবং ভারত মহাসাগরকে যুক্তকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। চিনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ এই পথের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে, চিনের ৮০ শতাংশ কাঁচা তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির মূল পথ এটি। কিন্তু যুদ্ধ বা সংকটের সময়ে এই প্রণালী বন্ধ হলে চিনের অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এই কারণে, তাইওয়ান আক্রমণের পরিকল্পনায় মলাক্কা প্রণালী চিনের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও বিকল্প পথের সন্ধান

চিন মলাক্কা প্রণালীর উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম শি জিনপিংয়ের স্বপ্নের প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ। এই প্রকল্পে রয়েছে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC), চিন-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডর (CMEC), এবং রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহনের পাইপলাইন। কিন্তু এই প্রকল্পগুলিও নানা জটিলতায় জর্জরিত।

চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC): ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে বালুচিস্তানের স্থানীয় বিদ্রোহীরা বাধা সৃষ্টি করেছে। বারবার আক্রমণের কারণে প্রকল্পের কাজ প্রায় থেমে গেছে।

চিন-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডর (CMEC): মায়ানমারে গৃহযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এই প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত করেছে।

রাশিয়া-সাইবেরিয়া পাইপলাইন: মঙ্গোলিয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা এই প্রকল্পেও বাঁধা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তক অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণের চিনা ইচ্ছা মস্কোর অসন্তোষ বাড়িয়েছে।

নৌবাহিনীর আধিপত্য ও আন্তর্জাতিক চাপ

দক্ষিণ চিন সাগর এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে বিশাল নৌবহর তৈরি করেছে চিন। আকারে এটি আমেরিকার নৌবাহিনীর থেকেও বড়। তবে কৌশলগতভাবে আমেরিকার আধিপত্যকে টপকাতে ব্যর্থ হয়েছে চিন। আমেরিকা, ভারত, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া মিলে কৌশলগত জোট গঠন করেছে, যা বেজিংয়ের ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে।

তাইওয়ান নিয়ে শি জিনপিংয়ের হুঁশিয়ারি

২০২৫ সালের শুরুতে শি জিনপিং নতুন বছরের ভাষণে আবারও তাইওয়ান দখলের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, “তাইওয়ান চিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের রক্তের বন্ধন কেউ ছিন্ন করতে পারবে না। মাতৃভূমির পুনর্মিলন এক ঐতিহাসিক প্রয়োজন।” তবে আমেরিকার সরাসরি সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ চিনের পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

২০২৭ বা ২০৩৫ সালের মধ্যে তাইওয়ান আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বেজিং। এর অংশ হিসেবে ২০২৪ সালে তিনবার বড় সামরিক মহড়া চালিয়েছে চিনা নৌসেনা। কিন্তু তাইওয়ানের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই হুমকিকে উপেক্ষা করছে না। আমেরিকা এবং তার মিত্র দেশগুলি তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তাইওয়ান নিয়ে শি জিনপিংয়ের মুখের গর্জন যতই তীব্র হোক না কেন, বাস্তবতার মাটিতে সেটি একপ্রকার অচলাবস্থায় রয়েছে। মলাক্কা প্রণালী এবং আন্তর্জাতিক প্রতিরোধের কারণে এই সংকট কেবল বাড়ছে। এর ফলে আগামী দিনগুলোতে চিনের পররাষ্ট্রনীতি এবং সামরিক কৌশল কীভাবে পরিবর্তিত হয়, তা নিয়ে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে।

‘ইচ্ছে ছিল মধ্যরাতে মেয়ের ছবি দেব’, কৃষভিকে প্রকাশ্যে আনলেন কাঞ্চন-শ্রীময়ী

Read more

Local News