প্রবীণদের ঘুমের সমস্যা
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। দিনের শেষে ক্লান্তি থাকলেও ঘুম আসে না, অথবা গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়। অনেকেই ভাবেন, অবসরের পর হয়তো নির্ভাবনায় ঘুমোতে পারবেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনিদ্রার কারণে দেহ ও মনে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই অনিদ্রাজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে স্ট্রেন্থ ট্রেনিং।
কেন প্রবীণদের ঘুম কমে যায়?
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মেটাবলিজম কমে যায় এবং দৈহিক পরিশ্রমের মাত্রাও হ্রাস পায়। অবসরের পর ব্যস্ততা কমে যায়, ফলে দিনের শেষে যে শারীরিক ক্লান্তি ঘুমের জন্য প্রয়োজন, তা অনেকেরই হয় না। এছাড়া মানসিক উদ্বেগ, একাকীত্ব, কিংবা কিছু শারীরিক অসুস্থতাও অনিদ্রার কারণ হতে পারে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রবীণদের মধ্যে যাঁরা কম সক্রিয় থাকেন, তাঁদের ঘুমের সমস্যা বেশি হয়। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন শারীরিক অনুশীলনকে প্রতিদিনের রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য।
গবেষণার তথ্য কী বলছে?
‘ফ্যামিলি মেডিসিন অ্যান্ড কমিউনিটি হেল্থ জার্নাল’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, শরীরচর্চার বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে স্ট্রেন্থ ট্রেনিং ঘুমের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী। গবেষণায় ২১০০ জন প্রবীণ অংশ নেন এবং ২৫টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে গবেষকেরা দেখেছেন, স্ট্রেন্থ ট্রেনিং এবং অ্যারোবিক ব্যায়াম অনিদ্রা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
এই গবেষণায় পাঁচটি ব্যায়ামের ধরন পরীক্ষা করা হয়:
- অ্যারোবিক ব্যায়াম (দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং ইত্যাদি)
- স্ট্রেন্থ ট্রেনিং (ওজন তোলা, রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যায়াম)
- ব্যালান্স ধরে রাখার ব্যায়াম (যোগব্যায়াম, তাই চি)
- ফ্লেক্সিবিলিটি এক্সারসাইজ (স্ট্রেচিং, শরীর নমনীয় করার ব্যায়াম)
- মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ এক্সারসাইজ (উপরের ব্যায়ামগুলোর সংমিশ্রণ)
গবেষণায় দেখা যায়, স্ট্রেন্থ ট্রেনিং, অ্যারোবিক ব্যায়াম এবং মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ এক্সারসাইজ অনিদ্রা দূর করতে বেশ কার্যকর। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ট্রেন্থ ট্রেনিং সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
স্ট্রেন্থ ট্রেনিং কীভাবে কাজ করে?
স্ট্রেন্থ ট্রেনিং মূলত পেশির শক্তি বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। নিয়মিত স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করলে:
- শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে, যা মানসিক চাপ কমায়।
- মাসল টোন উন্নত হয়, ফলে দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সারাদিন কর্মক্ষম থাকা যায়।
- মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়, যার ফলে শরীর সহজেই ক্লান্ত হয় এবং ঘুম ভালো হয়।
- সার্কাডিয়ান রিদম বা বায়োলজিক্যাল ক্লক ঠিক থাকে, ফলে রাতে সহজেই ঘুম আসে।
কীভাবে শুরু করবেন?
অনেক প্রবীণই ভাবেন, স্ট্রেন্থ ট্রেনিং হয়তো খুব কঠিন বা পরিশ্রমসাধ্য কিছু। কিন্তু বাস্তবে এটি সহজ কিছু অনুশীলনের মাধ্যমেও করা যায়।
স্ট্রেন্থ ট্রেনিংয়ের কিছু সহজ পদ্ধতি:
- হালকা ওজন বা ডাম্বল দিয়ে ব্যায়াম
- রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার করে অনুশীলন
- চেয়ার বা দেয়ালের সাহায্যে স্কোয়াট
- ধীরে ধীরে হাত ও পা টানটান করা ব্যায়াম
প্রথম দিকে হালকা অনুশীলন দিয়ে শুরু করা উচিত এবং ধীরে ধীরে সময় ও পরিশ্রমের মাত্রা বাড়ানো ভালো।
পরিশেষে
প্রবীণদের মধ্যে অনিদ্রা একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। ঘুমের ওষুধের উপর নির্ভর না করে স্ট্রেন্থ ট্রেনিংয়ের মতো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে দীর্ঘ মেয়াদে উপকার পাওয়া যাবে। তাই সুস্থ থাকতে এবং ভালো ঘুমের জন্য আজ থেকেই নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামকে জীবনের অংশ করে নিন।