Saturday, February 22, 2025

জেলে বসেই জঙ্গি-জাল বিস্তার: রহস্যময় রহমানি ও মুর্শিদাবাদের যোগসূত্র

Share

জেলে বসেই জঙ্গি-জাল বিস্তার!

জঙ্গি কার্যকলাপ দমন নিয়ে গোয়েন্দাদের একাধিক চাঞ্চল্যকর দাবি সামনে এসেছে। অসম পুলিশ সম্প্রতি যে ১২ জন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে, তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দুই বাসিন্দাও রয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, এ রাজ্যের জেলবন্দি কিছু জঙ্গি জেলের মধ্যেই সংগঠনের বিস্তার এবং কর্মপন্থা ঠিক করছে। তাদের নির্দেশ মেনে বাইরের সদস্যরা সংগঠনের কাজ চালাচ্ছে।

রহমানি এবং মুর্শিদাবাদের যোগসূত্র

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ২০২৫ সালের অগস্ট মাসে বাংলাদেশে সরকার বদলের পর আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানি জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সীমান্ত পেরিয়ে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করেন। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি মুর্শিদাবাদের দুর্লভপুর এবং ভোলা গ্রামে আসেন। এই দুটি গ্রাম যথাক্রমে এবিটি জঙ্গি সন্দেহে ধৃত সাজিবুল ইসলাম এবং মুস্তাকিন মন্ডলের বাড়ি। তবে সাজিবুলের মা তানজিরা বেওয়া দাবি করেছেন যে, তাদের বাড়িতে বাংলাদেশ থেকে কেউ কখনো আসেনি।

ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া তথ্য

পুলিশের তল্লাশিতে সাজিবুলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ডায়েরি, যেখানে আরবি-সহ বিভিন্ন ভাষায় লেখা কিছু সাঙ্কেতিক বার্তা রয়েছে। এই বার্তাগুলো সংগঠনের কাজ ও অর্থ সংগ্রহে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

তদন্তে আরও জানা গেছে, ধৃত মিনারুল শেখ এবং নুর ইসলাম মন্ডলের মোবাইল কথোপকথনের মাধ্যমে জেলবন্দি জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এই নেটওয়ার্ক দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় এবং এতে অনেক জেলবন্দি জঙ্গি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত।

জেল থেকেই নির্দেশ

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলে প্রায় ৪০ জন জঙ্গি বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং আনসারুল্লা বাংলা টিমের সদস্যরা রয়েছে। ২০১৪ সালের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ এবং বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন জঙ্গিও সেই তালিকায় রয়েছে।

এদের মধ্যে মিনারুল শেখ এবং আব্বাস আলির সঙ্গে কলকাতার বাইরের একটি জেলে বন্দি এক জঙ্গির নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এই জঙ্গি বন্দি সংগঠনের বিস্তার ও অর্থ সংগ্রহের জন্য নির্দেশ দিত। তাদের মাধ্যমে সংগঠনের কাজ চালানো হচ্ছিল স্লিপার সেলের আড়ালে।

রহমানির ভূমিকা

গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, এবিটি প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানি এবং তার সহকারী ফারহান ইসরাকের সঙ্গে এ রাজ্যের জেলবন্দিদের যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্বে ছিল নুর ইসলাম মন্ডল। নুর ইসলাম এখানকার এবিটি মডিউলের প্রধান হিসেবে কাজ করত। তার নির্দেশেই মুর্শিদাবাদ থেকে সাজিবুল এবং মুস্তাকিনকে গ্রেফতার করা হয়।

গোয়েন্দাদের তদন্ত ও নতুন চ্যালেঞ্জ

গোয়েন্দারা জানান, জেলবন্দি অবস্থায় সংগঠনের বিস্তার করা নতুন একটি চ্যালেঞ্জ। এর আগে মাদক এবং অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ জেলের মধ্য থেকেই চালানোর উদাহরণ থাকলেও, জঙ্গি কার্যকলাপে এমন সংগঠিত পরিকল্পনার নজির কম। ইতিমধ্যেই জেলবন্দি কয়েকজনের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

জঙ্গি সংগঠনের বিস্তার রোধে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সংগঠনের বিস্তার, সদস্য সংখ্যা এবং অর্থ সংগ্রহের পদ্ধতি সম্পর্কে আরও তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে।

উপসংহার

মুর্শিদাবাদে এবিটি প্রধানের উপস্থিতি এবং জেলবন্দি জঙ্গিদের ভূমিকা পশ্চিমবঙ্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনা সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং তৎপরতার প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

আমেরিকায় দুষ্কৃতী হানায় মৃত বেড়ে ১৫! ঘাতক প্রাক্তন সেনাকর্মীর গাড়িতে মিলল আইএসের পতাকা

Read more

Local News