Thursday, January 30, 2025

কালীঘাটের মাটি: কলকাতার বিপদ সংকেত, বহুতল হেলে পড়ছে।

Share

কালীঘাটের মাটি

কলকাতা শহরের মাটি ক্রমশই বিপদজনক হয়ে উঠছে। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, শহরের মাটির নীচের স্তরের পরিবর্তন শহরের বহুতল নির্মাণের জন্য বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে একের পর এক বহুতল হেলে পড়ছে, বিশেষত বাঘাযতীন, ট্যাংরা, এবং চৌরঙ্গির মতো এলাকায়। কালীঘাট ফর্মেশন নামের ভূতাত্ত্বিক গঠন এর পেছনের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসছে, যা বর্তমানে বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে।

কালীঘাট ফর্মেশন এবং ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবনতি:
ভূবিজ্ঞানী সুজীব কর জানাচ্ছেন, কালীঘাট অঞ্চলের মাটি মূলত আঠালো এবং থকথকে হলেও, এর নিচের স্তর অত্যন্ত ভঙ্গুর এবং ঝুরঝুরে। এই অঞ্চলের মাটির স্তরের অবস্থা প্রায়ই বদলাচ্ছে, যা উপরের স্তরে চাপ সৃষ্টি করছে। গবেষণা অনুযায়ী, কলকাতার ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ নিচে নামছে, যার ফলে মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে এবং কালীঘাট ফর্মেশনের নিচের স্তর আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এখানকার বিশেষত্ব হলো, হাজার দেড়েক বছর আগে কালীঘাট ছিল একটি দ্বীপ, এবং পলি জমার এক প্রক্রিয়া এখানে শুরু হয়। সেই সময় থেকেই কলকাতা শহরের নিচের স্তরের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু আজকাল, শহরের ব্যাপক নির্মাণ কার্যক্রম এবং জলাশয় ভরাটের কারণে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নিচে নেমে যাচ্ছে এবং মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে।

হেলানো বহুতল এবং ক্রমবর্ধমান বিপদ:
এখন শহরের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষত গঙ্গার ধারে, যেমন বাবুঘাট, বড়বাজার, কাশীপুর, দক্ষিণেশ্বর, গার্ডেনরিচ, মানিকতলা, বিধাননগর, নবান্ন, এবং কোনা এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন এলাকায় মাটির নীচে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এই সব এলাকার বাসিন্দারা শঙ্কিত, কারণ তাদের আশপাশের বহুতলগুলি হেলে পড়ছে। গবেষণা বলছে, গঙ্গার দু’পারে প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার এলাকাই সবচেয়ে বিপন্ন।

শুষ্ক ভূগর্ভ এবং জল সংকট:
এছাড়া, ভূগর্ভস্থ জলস্তরের সমস্যা আরও বাড়ছে, কারণ মাটি নিজে থেকেই জল টানতে চাচ্ছে, যা জলপ্রবাহের চ্যানেল তৈরি করছে। কিন্তু এই চ্যানেলগুলির ফলে মাটির তলায় ফাঁপা জায়গা সৃষ্টি হচ্ছে। কলকাতা শহরে পানির পরিমাণ কমছে, আর জল টেনে নেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে, ভূগর্ভের গঠন আরও দুর্বল হচ্ছে।

সমাধান কী?
নির্মাণ বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, শহরের মাটির ধারণক্ষমতা সম্পর্কে আরও সতর্কভাবে হিসেব করা উচিত। তিনি বলেন, শুধু মাটির চরিত্র পরীক্ষা করে বহুতল নির্মাণ করা যথেষ্ট নয়, বরং শহরের প্রতিটি অঞ্চলের জন্য হিসেব করতে হবে কতটা চাপ মাটি ধারণ করতে পারে। এছাড়াও, ভূগর্ভস্থ জলস্তর পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন, যেমন কংক্রিটের আচ্ছাদন কমানো এবং পানি সংরক্ষণে ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি।

আরেক ভূবিজ্ঞানী পৃথ্বীশকুমার রায় জানিয়েছেন, “মুল সমস্যা হল ভূগর্ভস্থ জল কমে যাওয়া। যদি প্রত্যেকটি বহুতলকে বাধ্য করা হয় তাদের ব্যবহৃত জল মাটির তলায় পাঠাতে, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে।” এছাড়া, শহরের অনেক এলাকায় কংক্রিটের আচ্ছাদন কমিয়ে, খোলা জায়গা রাখতে হবে, যাতে জল মাটির তলে ঢুকতে পারে।

উপসংহার:
কলকাতা এবং হাওড়ার ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবনতি এবং মাটির ভঙ্গুর স্তর একে একে বিপদের মুখে দাঁড় করাচ্ছে। ভূবিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন, এবং শহরের নির্মাণ কার্যক্রমের প্রতি আরও গভীর মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা জানিয়েছেন। যদি এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা না যায়, তবে বহুতল নির্মাণ এবং শহরের স্থিতিশীলতা নিয়ে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।

আদানি-পুত্রের বিয়ে: জাঁকজমক না কি সাদামাটা আয়োজন?

Read more

Local News