রাশিয়ার তরুণ প্রজন্মের নীল ছবির নেশা
রাশিয়ার যুব সমাজে ক্রমবর্ধমান পর্নোগ্রাফি আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোয় অনুষ্ঠিত বার্ষিক “ডিরেক্ট লাইন” অনুষ্ঠানে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, পর্নোগ্রাফি দেশের সামাজিক কাঠামো ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করছে। যুবসমাজকে এই আসক্তি থেকে মুক্ত করতে বিকল্প উপায় বের করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
রাশিয়া টুডে-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুতিন বলেছেন, “এটি শুধু রাশিয়ার সমস্যা নয়। বিশ্বজুড়েই পর্নোগ্রাফির বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আমরা আমাদের যুব সমাজকে এই অন্ধকার থেকে বের করে আনতে চাই। তাদের সামনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে, এবং আমরা তা ধ্বংস হতে দিতে পারি না।”
পর্নোগ্রাফির ক্ষতিকারক প্রভাব ও বিকল্পের খোঁজ
পুতিনের মন্তব্যের পর রাশিয়ায় পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবে রাষ্ট্রপ্রধানের মন্তব্য স্পষ্টভাবে বিকল্প তৈরির আহ্বান জানিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, “শুধু নিষিদ্ধ করাই যথেষ্ট নয়; মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পর্নোগ্রাফির চেয়েও আকর্ষণীয় কিছু তৈরি করতে হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে পরিবর্তন আনতে প্রেসিডেন্ট মরিয়া চেষ্টা করছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রশংসা এবং আরও বেশি ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের প্রস্তাব তারই একটি উদাহরণ। ব্রিকস সম্মেলনের আগে তিনি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
জন্মহার কমার পেছনে পর্নোগ্রাফির ভূমিকা
সম্প্রতি রাশিয়ার জন্মহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পুতিন। দেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে মেয়েদের মধ্যে মাতৃত্বের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি। গবেষকরা বলছেন, যুবসমাজে পর্নোগ্রাফি আসক্তি জন্মহারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিশ্বজুড়ে পর্নোগ্রাফি এবং রাশিয়ার অবস্থান
পর্নোগ্রাফি নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন আইন রয়েছে। যেমন চিনে এটি পুরোপুরি নিষিদ্ধ, ইজরায়েলে আংশিকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে রাশিয়া এখনও পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটেনি। অন্যদিকে, আমেরিকাতেও এই সমস্যা নিয়ে চিন্তা চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে এই বিষয়ে কথা বলেছেন এবং পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ভারতেও পর্নোগ্রাফি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গুরুত্বপূর্ণ রায় দেওয়া হয়েছে। শিশু পর্নোগ্রাফি দেখা এবং ডাউনলোড করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে এটি দেখা অপরাধ নয়, যদি তা কারও অসুবিধার কারণ না হয়।
পর্নোগ্রাফি ও সমাজে অপরাধ
পর্নোগ্রাফি দেখা অনেক সময় অপরাধমূলক প্রবৃত্তি বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালের দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডে অভিযুক্তরা অপরাধ করার আগে মোবাইলে পর্নোগ্রাফি দেখেছিল। এ ধরনের ঘটনা পর্নোগ্রাফি এবং অপরাধের সংযোগ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
বিকল্প কী হতে পারে?
পুতিনের মতে, শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। মানুষকে আরও আকর্ষণীয় ও শিক্ষামূলক বিনোদনের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। প্রযুক্তি, প্রশাসন এবং আইনের সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার এই উদ্যোগ অন্যান্য দেশকেও পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকে একযোগে কাজ করতে হবে।
রাশিয়ার যুবসমাজকে একটি ইতিবাচক ও সৃজনশীল পথে পরিচালিত করার প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। পুতিনের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

