Wednesday, December 10, 2025

গোর্খাল্যান্ড সেতু বিতর্কের রেশ? তিন মাসের জন্য বন্ধ দার্জিলিঙের ঐতিহ্যবাহী ‘গ্লেনারিজ়’ পানশালা

Share

গোর্খাল্যান্ড সেতু বিতর্কের রেশ?

দার্জিলিঙের হৃৎকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা ‘গ্লেনারিজ়’ রেস্তরাঁ শহরের ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বহু দিন ধরে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ এই রেস্তরাঁর নীচতলার পানশালা ও লাইভ মিউজ়িক জোন। কিন্তু মঙ্গলবার হঠাৎই সেই জনপ্রিয় পানশালার দরজায় তালা পড়ল। আগামী তিন মাসের জন্য সেটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ আবগারি দফতর। অভিযোগ—প্রয়োজনীয় নথি ছাড়াই পানশালা চালানো হচ্ছিল এবং একাধিক আইনি বেনিয়ম ছিল সেখানে।

ঘটনা যতটা প্রশাসনিক, পাহাড়ের রাজনীতির আলোচনায় তা এখন ততটাই সংবেদনশীল। কারণ, মাত্র দু’দিন আগেই ‘ইন্ডিয়ান গোর্খা জনশক্তি ফ্রন্ট’-এর প্রধান অজয় এডওয়ার্ডস এক নবনির্মিত সেতুর উদ্বোধন করে নিন্দার মুখে পড়েন। সেতুটির সামনে বড় করে লেখা ছিল—‘গোর্খাল্যান্ড’। দীর্ঘ দিনের পৃথক রাজ্যের দাবি ঘিরে পাহাড়ে যে উত্তাপ তৈরি হয়, সেটিরই যেন নতুন অধ্যায় শুরু হয় সেই লেখাকে ঘিরে।

অভিযোগ—প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই চলছে পানশালা

আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযানে দেখা যায়, গ্লেনারিজ়ের পানশালায় একাধিক ত্রুটি রয়েছে। লাইভ মিউজ়িক এবং মদ পরিবেশনের জন্য যে ধরনের অনুমতি প্রয়োজন, তার অনেকগুলোই নাকি অনুপস্থিত ছিল। ফলে তদন্তের ভিত্তিতে আগামী তিন মাসের জন্য লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে।

এক আবগারি আধিকারিকের বক্তব্য—
“অভিযোগের ভিত্তিতেই এই অভিযান। কাগজপত্র ঠিক না থাকায় আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ চাইলে আপিল করতে পারবেন।”

এদিকে রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষের তরফে এখনো কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

গোর্খাল্যান্ড সেতু ও নতুন বিতর্ক

বিজনবাড়ির জোড়বাংলোয় টুংসুং চা-বাগানের কাছে টুংসুং খোলা নদীর উপর তৈরি হয়েছে নতুন ১৪০ ফুটের একটি সেতু। স্থানীয় মানুষ, ১৬টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও অজয়ের আর্থিক সহায়তায় তৈরি হয়েছে সেতুটি—সরকার বা জিটিএ কোনও অর্থ দেয়নি বলে দাবি করা হয়।

রবিবার সেই সেতুর উদ্বোধনে ‘গোর্খাল্যান্ড’ লেখা সামনে রেখে ফিতা কাটেন অজয়। এমন নামকরণ নিয়ে পাহাড়ে একাংশ রাজনৈতিক দল ক্ষোভ প্রকাশ করে। জিটিএ–র মতে, অনুমতি ছাড়াই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, নামকরণও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তবে অজয়ের দাবি,
“গোর্খাল্যান্ড আমাদের স্বপ্ন। সরকারি সাহায্য না পেয়ে আমরা নিজেদের উদ্যোগে সেতু তৈরি করেছি। নামকরণ নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কোনও কারণ নেই।”

রাজনৈতিক মহলে ‘যোগসূত্র’ খোঁজা হচ্ছে

সেতু বিতর্কের পরই গ্লেনারিজ় পানশালা বন্ধ হওয়ার ঘটনায় পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি—এ দুটি ঘটনার মধ্যে “টাইমিং”–এর দিক থেকে মিল রয়েছে। সরাসরি সংযোগ প্রমাণ হয়নি, তবুও বহু রাজনীতিক মনে করছেন, এটি নিছক কাকতালীয় নয়।

জিটিএ–র মুখপাত্র শক্তি শর্মা বলেন—
“লাইসেন্সে ত্রুটি থাকায় আবগারি দফতর পানশালা ও মিউজ়িক জোন ৯০ দিনের জন্য বন্ধ করেছে। নিয়ম না মানলে এমনটাই হওয়ার কথা।”

ভবিষ্যৎ কী?

তিন মাস পর কর্তৃপক্ষ আপিল করলে পানশালা পুনরায় চালু হতে পারে—তবে তা নির্ভর করছে কাগজপত্র ঠিকঠাক করা ও তদন্তে সন্তুষ্ট করার উপর। অন্যদিকে সেতু-নামকরণ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

Read more

Local News