কী ভাবে লোকসান কাটিয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ান বিদ্যুৎ জামাল?
বলিউডে তিনি অনন্য। কখনও প্রচারের আলোতে থাকতে চান না, আবার নিজের কাজ, শৃঙ্খলা আর ফিটনেসে অনড় বিদ্যুৎ জামাল বরাবরই নজর কাড়েন। ৪৫ বছর পূর্ণ করলেন অভিনেতা, আর এই দীর্ঘ সময়ে নিজের আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন তিনি— একজন মার্শাল আর্ট বিশেষজ্ঞ, অ্যাকশনস্টার এবং স্বনির্মিত প্রযোজক হিসেবে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এত কিছুর পরেও তিনি বছরে মাত্র একটি করে ছবিতে কাজ করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। তবুও তাঁর আয়-সম্পত্তি রীতিমতো তাক লাগানোর মতো।
চলচ্চিত্র জীবনের সাম্প্রতিক সময়
২০২৫ সালে বিদ্যুতের একমাত্র মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল তামিল ভাষায়— ‘মাধারাসি’। ২০২৪ সালে তিনি নোরা ফতেহির সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন ‘ক্র্যাক’ ছবিতে, যদিও দর্শকের প্রশংসা সেভাবে মেলেনি। ২০২৩ সালের ‘আইবি৭১’ ছবিটিও মাঝারি সাফল্য পায়। বছরের হিসাব দেখলে বোঝাই যায়, বিদ্যুৎ চট করে প্রজেক্টে সই করেন না— বেছে বেছে কাজ করেন, এবং সময় নিতে ভালোবাসেন।
কিন্তু কম কাজ করলেও তাঁর পারিশ্রমিক কম নয়। প্রতি ছবিতে বিদ্যুৎ নেন ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা। পাশাপাশি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের সঙ্গে এনডোর্সমেন্টও করেন তিনি, যার জন্য ৩৫–৪০ লক্ষ টাকা করে পান। সব মিলিয়ে তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় ৭ কোটি টাকার কাছাকাছি।
‘ক্র্যাক’-এর ধাক্কা! কোটি টাকার লোকসান সামলালেন কী ভাবে?
২০২৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ক্র্যাক’ ছিল বিদ্যুতের হৃদয়ের প্রকল্প। শুধু অভিনয়ই নয়, ছবিটির প্রযোজনাতেও যুক্ত ছিলেন তিনি। বাজেট ছিল প্রায় ৪৫ কোটি টাকা, কিন্তু বক্স অফিসে সংগ্রহ হয় মাত্র ১৭ কোটি। অর্থাৎ, বিশাল অঙ্কের ক্ষতিতে পড়েন তিনি।
কিন্তু এখানেই বিদ্যুতের লড়াই করার মানসিকতা প্রকাশ পায়।
অভিনেতা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন—
“চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল এত বড় লোকসান কীভাবে সামলাব!”
এই সময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন ফরাসি সার্কাসে যোগ দেওয়ার। বিদ্যুতের মার্শাল আর্ট দক্ষতার কথা সর্বজনবিদিত— সেটিকেই নতুনভাবে কাজে লাগালেন তিনি। ১৪ দিন ফ্রান্সে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং বিভিন্ন শো, স্টান্ট প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই তিনি ছবির ক্ষতি পূরণ করে ফেলেন। এই অনন্য উদ্যোগই আজ তাঁকে শিল্পের একজন ‘ফাইটার’ এবং ‘সারভাইভার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কোটি টাকার সম্পত্তি
বিদ্যুতের সম্পদের পরিমাণ বেশ উল্লেখযোগ্য—
- আলিবাগে ২০ কোটি টাকার এক বিশাল বাড়ি
- মুম্বইয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট
- ব্যাঙ্ক ব্যালান্স, প্রযোজনা সংস্থা এবং ব্র্যান্ড চুক্তি মিলিয়ে আরও বেশ কিছু ব্যক্তিগত সম্পদ রয়েছে তাঁর।
ব্যক্তিগত জীবন
ক্যারিয়ারের মতোই ব্যক্তিগত জীবনেও থাকতে চান সরল এবং শান্ত। একসময় অভিনেত্রী মোনা সিংহের সঙ্গে ২ বছরের সম্পর্ক ছিল তাঁর— ২০১৪ সালে বিচ্ছেদ হয়। পরে ২০২১ সালে পোশাক শিল্পী নন্দিতা মহতানিকে প্রেমের প্রস্তাব দেন তিনি। দীর্ঘ বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক তৈরি হলেও ২০২৩ সালে তা ভেঙে যায়।
বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সিঙ্গল।
শেষ কথা
অনেকে মনে করেন বেশি কাজ মানেই বেশি আয়, কিন্তু বিদ্যুৎ জামাল দেখিয়েছেন— দক্ষতা, শৃঙ্খলা এবং অধ্যবসায় থাকলে বছরে একটি ছবিতেই ক্যারিয়ার ও সম্পত্তি সমান ভাবে এগিয়ে যেতে পারে। বিপদের সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং নতুন পথ খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতাই তাঁকে আজকের বিদ্যুৎ জামাল করে তুলেছে।

