Monday, December 8, 2025

শাকিব খানের উত্থানের অজানা কাহিনি: ‘লিপস্টিক পরা নায়ক’ থেকে ঢালিউডের একক ‘ইন্ডাস্ট্রি’!

Share

শাকিব খানের উত্থানের অজানা কাহিনি

বাংলাদেশের বর্তমান চলচ্চিত্রে এক নতুন প্রজন্মের তারকার দাপট ক্রমশ বেড়েছে—অপূর্ব, আফরান নিশো, শরিফুল রাজ, সিয়াম আহমেদদের উপস্থিতি সেই প্রমাণই দেয়। তাঁদের অভিনয়, জনপ্রিয়তা এবং বক্স অফিস পারফরম্যান্স বহু ক্ষেত্রেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবু দর্শকদের মুখে একটাই নাম বারবার ঘুরে ফিরে আসে—শাকিব খান। ঢালিউডে তিনিই ‘ইন্ডাস্ট্রি’, এমন তকমা আজও অটুট।

২০২৩ সালে নিশোর প্রথম ছবি ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তির আগেই হইচই শুরু হয়েছিল। অনেকেই ভাবছিলেন, এত দিনে বোধহয় শাকিবের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী এসে গিয়েছে। কিন্তু ছবিটি সুপারহিট হলেও ‘সুপারস্টার’ হিসেবে দর্শকের কাছে নিশো সেই জায়গা দখল করতে পারেননি। ঢালিউডের দর্শকেরা শাকিবকে নিয়ে কোনও নেতিবাচক মন্তব্য সহ্য করতে চান না—এ মত বহু পুরনো ভক্তের।

শাকিবের এই আকাশচুম্বী অবস্থানে পৌঁছতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ২৬ বছর। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে শাকিল খান, রিয়াজ़, ফেরদৌসদের ভিড়ে তিনি ছিলেন খানিক পিছনেই। তখনকার সংবাদমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ‘লিপস্টিক পরা গরিবের নায়ক’—এমন ঠাট্টাও হতো। আজ সেই মানুষটিই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একচ্ছত্র সম্রাট।

টাইম স্কোয়ারে তাঁর ছবির প্রচার, দুই বাংলায় জনপ্রিয়তা—সব মিলিয়ে শাকিবের দাপট যেন ক্রমশ বাড়ছেই। এই সাফল্যের মূল কারণ কী? পরিচালকদের বক্তব্য একটাই—শাকিব নিজের ওপর প্রতিনিয়ত কাজ করেন।

‘তুফান’ এবং ‘তাণ্ডব’-এর পরিচালক রায়হান রাফি জানিয়েছেন, শাকিব অসাধারণ পরিশ্রমী। একবার শুটিং চলাকালীন তাঁর রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু কাজ বন্ধ না করার জন্য তিনি কাউকে জানাননি। শট শেষ হওয়ার পর পরিচালকের জানা যায় সত্যি। আবার কোনও ছবির জন্য দুই সপ্তাহে ১২ কেজি ওজন কমানোর কথাও তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।

‘বরবাদ’-এর প্রযোজক শাহরিন সুমিও মনে করেন, শাকিবের পরিবর্তনশীল মনোভাবই তাঁকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের পরিচালকদের ভাবনা শুনে নিজেকে বদলে নিতে সব সময় প্রস্তুত তিনি। তাঁর সমসাময়িক অনেকে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন, আর অন্যরা সুযোগও পান না। এই জায়গায় দাঁড়িয়েও তিনি যে নিজেকে রোজ নতুন করে তুলে ধরেন, সেটাই তাঁকে এগিয়ে রাখে।

২০২৩ সালে যখন ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি পেল, নিশোর মন্তব্যে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই সময়ই স্পষ্ট হয়েছিল—বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে শাকিব খান শুধু নায়ক নন, আবেগ। তাই অন্য নায়কেরা বছরে এক-দু’টি ছবি করলেও শাকিবের ধারাবাহিকতা এবং বক্স অফিস দাপট তাঁকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে শাকিবের ছবিতে কলকাতার নায়িকাদের উপস্থিতিও আলোচনায়। মিমি চক্রবর্তী, ইধিকা পাল, দর্শনা বণিকের পর এবার জ্যোতির্ময়ী কুণ্ডু ‘প্রিন্স’ ছবিতে অভিনয় করছেন। পরিচালকদের মতে, নায়িকা নির্বাচন পুরোপুরি চিত্রনাট্যনির্ভর। তবে দর্শকরাও শাকিবের বিপরীতে কলকাতার নায়িকাদের দেখতে ভালোবাসেন।

ন্যায়িকারূপে দর্শনা বণিক জানিয়েছেন, শাকিব এখন আর আগের ধাঁচের ছবি করেন না। তিনি দৃশ্য ধরে ধরে নিখুঁত অভিনয়ের চেষ্টা করেন। যতক্ষণ না শট পুরোপুরি সন্তোষজনক হয়, তিনি ক্যামেরার সামনে বারবার দাঁড়াতে রাজি। এই পেশাদারিত্বই তাঁকে আজকের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।

চলচ্চিত্রের ভাষা বদলাচ্ছে, গল্প বদলাচ্ছে, নায়কের ধারণাও বিবর্তিত হচ্ছে। তবু শাকিব নিজের ভেতরের অভিনেতাকে আরও তীক্ষ্ণ করে নিয়ে চলেছেন। অ্যাকশনের পাশাপাশি নাটকীয় দৃশ্যে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ তাঁর অটুট।

আর তাই—সমালোচনা, প্রতিযোগিতা কিংবা নতুন প্রজন্মের আগমনের মাঝেও ঢালিউডের শ্রেষ্ঠ ‘ইন্ডাস্ট্রি’ হিসেবে শাকিব খান এখনও অদ্বিতীয়।

Read more

Local News