Sunday, December 7, 2025

নিয়তি, লড়াই ও ত্যাগ— ছোটপর্দা ছাড়ার নেপথ্যে অলিভিয়ার অজানা সংগ্রামের কাহিনি

Share

ছোটপর্দা ছাড়ার নেপথ্যে অলিভিয়ার অজানা সংগ্রামের কাহিনি!

টলিপাড়ার পরিচিত মুখ অলিভিয়া সরকার। সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজ় কিংবা সিনেমা— বিভিন্ন ফরম্যাটে দর্শক তাঁকে দেখেছেন, গ্রহণও করেছেন। তবুও প্রায় ছ’ বছর ছোটপর্দা থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও তাঁকে দেখা যাচ্ছে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘মিলন হবে কত দিনে’-তে, যেখানে তিনি নায়কের বোনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। কিন্তু হঠাৎ কেন ছোটপর্দা থেকে এত দীর্ঘ সময়ে দূরে ছিলেন অলিভিয়া? সেই উত্তরেই লুকিয়ে রয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রাম, মানসিক চাপ এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অসামান্য সাহস।

“নিজেকে মেশিন মনে হচ্ছিল”— অলিভিয়া

অলিভিয়ার মতে, ছোটপর্দার কাজের চাপ তাঁকে ধীরে ধীরে ক্লান্ত করে তুলছিল। টানা শুটিং, একই ধরনের চরিত্র, এবং কাজের পুনরাবৃত্তি— সব মিলিয়ে অনুভব করেছিলেন, যেন তিনি যন্ত্রের মতো কাজ করে যাচ্ছেন। অভিনেত্রীর কথায়,
“মনে হত, আমি অভিনয় করছি না, শুধু কাজ সারছি। নিজের জন্য কোনও সময়ই থাকত না।”
এ কারণেই দীর্ঘ চিন্তার পরে তিনি বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও থেমে থাকেননি। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নতুন নতুন প্রকল্পে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন তিনি।

কাজ ছাড়া আর্থিক টানাপোড়েন— ‘ফ্ল্যাট বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলাম’

ছোটপর্দার কাজ না করলে আর্থিক চাপ বাড়ে— এ কথা অনেকেই বলেন। অলিভিয়াও এই বাস্তবতা থেকে মুক্ত নন। তিনি অকপটে জানিয়েছেন,
“একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। দেড় বছরও থাকতে পারিনি। শেষে বিক্রি করতে হয়েছে।”

অভিনেত্রীর মা অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার খরচের জন্য প্রয়োজন ছিল নিয়মিত অর্থ পাঠানোর। কিন্তু ছোটপর্দা থেকে সরে আসায় আয় কমে যায়। তিনি বলেন,
“মায়ের জন্য যথেষ্ট টাকা পাঠাতে পারিনি, সেটা খুব কষ্ট দিয়েছে।”

তার পরেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন অলিভিয়া। তিনি এই কঠিন সময়টাকে নিজের শক্তির পরীক্ষা হিসেবে দেখেছেন। তাঁর উপলব্ধি— যদি এই সময় পার করতে পারেন, তবে ভবিষ্যতে যেকোনও বিপদই সামলাতে পারবেন।

নিজেকে নতুনভাবে গড়ার সময়

এই বিরতিটাই তাঁকে নিজের মতো গড়ে ওঠার সুযোগ দেয়। তিনি বেছে বেছে কাজ করার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। অভিনয়কে ভালবাসেন বলেই কোনও কাজেই আপস করতে চান না। তাই প্রচুর অফার থাকলেও তিনি চিন্তাভাবনা করেই প্রকল্প বেছে নিয়েছেন।

নতুন ধারাবাহিক ‘মিলন হবে কত দিনে’-এ তাঁর চরিত্রটি ইতিবাচক বা নেতিবাচক— কোনও নির্দিষ্ট গণ্ডিতে ফেলা যায় না। এক কথায়, একটি ধূসর চরিত্র, যার কাজকর্ম কখনও সঠিক, কখনও বিতর্কিত। অলিভিয়ার মতে,
“দর্শক দেখলে বুঝতে পারবেন চরিত্রটি কতটা বাস্তব এবং কতটা প্রয়োজনীয়।”
এই চরিত্রে তিনি দারুণভাবে নিজেকে উপভোগ করছেন।

টলিউডে নিজের জায়গা তৈরি— দৃঢ়তায় ভর করে

অলিভিয়ার গল্প আসলে এক রকমের অদম্য লড়াইয়ের গল্প। যেখানে আর্থিক সঙ্কট, পরিবারের দায়িত্ব, কাজের চাপ— সবকিছুর মাঝেও তিনি নিজের মতো থাকার সাহস দেখিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, অভিনয় শুধুমাত্র পরপর কাজ পাওয়ার উপর নির্ভর করে না; বরং শিল্পী হিসেবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

দীর্ঘ বিরতির পর তাঁর প্রত্যাবর্তন দর্শকের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনই অনুপ্রেরণা— কারণ অলিভিয়া দেখিয়ে দিয়েছেন, বিরতি মানে পিছিয়ে পড়া নয়, বরং নিজেকে ফিরে পাওয়ার পথও হতে পারে।

Read more

Local News