🌆 ভিক্টোরিয়ার ভিড় নয়, খুঁজে নিন কলকাতার লুকোনো রত্ন—শীতেই দেখুন শহরকে নতুন চোখে

ভিক্টোরিয়ার ভিড় নয়, খুঁজে নিন কলকাতার লুকোনো রত্ন

কলকাতার নাম উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে শহিদ মিনার, ময়দান, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভারতীয় জাদুঘর কিংবা আলিপুর চিড়িয়াখানার ছবি। বহু বছর ধরে এই নামগুলিই পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র। কিন্তু এই বিশাল শহরের গলি–উপগলি, ঐতিহ্য আর ইতিহাসের ছাপ লুকিয়ে রয়েছে আরও বহু অজানা-অচেনা কোণে। শীতের আবহে, যখন শহরটা একটু বেশি আপন, তখন সেই কম পরিচিত জায়গাগুলো ঘুরে দেখাই ভিড় এড়িয়ে কলকাতাকে নতুন করে চেনার সবচেয়ে সুন্দর পথ হতে পারে।

নিচে এমন পাঁচটি স্বল্পচেনা অথচ দর্শনীয় ঠিকানা দেওয়া হল, যেখানে গেলে মনে হবে, শহরটাকে যেন নতুন রূপে আবিষ্কার করছেন।

১) মাগেন ডেভিড সিনাগগ—ইহুদি ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী

ক্যানিং স্ট্রিট ও ব্র্যাবোর্ন রোডের কাছেই দাঁড়িয়ে আছে কলকাতার ইহুদি সম্প্রদায়ের স্থাপত্য-ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন—মাগেন ডেভিড সিনাগগ। বাইরে থেকে লাল ইঁটের এই উঁচু গির্জা-সদৃশ গঠন ভিতরে ঢুকলেই অন্য রূপ নেয়। বিশাল হলঘর, রঙিন কাঁচের জানলা দিয়ে ঢুকে তৈরি হয় অপূর্ব আলোকছটা, আর চারদিকে গভীর নীরবতা—সব মিলিয়ে জায়গাটি তৈরি করে মন্থর, শান্ত পরিবেশ। প্রার্থনার উঁচু মঞ্চটি এর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। শহরের ব্যস্ততার মধ্যেই এই স্থাপনা যেন প্রশান্তির আরেক নাম।

সময়: সকাল ১০টা–বিকেল ৪টে, শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ।

২) আরবিআই মিউজ়িয়াম—টাকার ইতিহাসের অদ্ভুত জগৎ

বিবিডি বাগের কাছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রা ভুবন বা আরবিআই মিউজ়িয়াম ছোটদের জন্য যেমন আকর্ষণীয়, বড়দের জন্যও তেমনই তথ্যবহুল। এখানে দেখা যাবে বিভিন্ন যুগের দুর্লভ নোট ও মুদ্রা, তাদের গঠনের ইতিহাস, পুরনো বাতিল নোটের সংগ্রহ, এমনকি বিশাল আকারের এক টাকার কয়নের প্রতিলিপি। ‘গোল্ড ভল্ট’ কেমন হয়, তার মডেলও রয়েছে। অর্থনীতি বোঝার একটি অনন্য মাধ্যম।

সময়: সকাল ১০টা–বিকেল ৫টা, সোমবার বন্ধ।

৩) ইডেন গার্ডেন্স উদ্যান—স্টেডিয়ামের বাইরেও আরেক সবুজ পৃথিবী

ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে ইডেন গার্ডেন্স মানেই স্টেডিয়াম। কিন্তু স্টেডিয়াম লাগোয়া ইডেন গার্ডেন উদ্যান—একটি শান্ত, বিস্তৃত পার্ক অনেকেই দেখেননি। সুন্দরভাবে সাজানো বাগান, প্রশস্ত পথ আর গাছপালায় ঘেরা পরিবেশ। এখানে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় বার্মিজ প্যাগোডা, যা নাকি মায়ানমারের সামগ্রী এনে তৈরি হয়েছিল। শীতের অলস দুপুরে এখানে বসে সময় কাটানো এক বিশেষ আনন্দ।

৪) পার্শ্বনাথ জৈন মন্দির—কারুকাজে ভরা এক অপূর্ব ধর্মস্থল

মানিকতলা থেকে একটু এগোলেই বদ্রীদাস টেম্পল স্ট্রিটে দেখা মিলবে জৈনদের শতাব্দীপ্রাচীন মন্দির কমপ্লেক্স। চারটি মন্দিরের সমাহার—শীতলনাথজি, চন্দ্রপ্রভুজি, দাদাওয়াড়ি ও মহাবীর স্বামী। চকচকে মার্বেলের নির্মাণশৈলী, ফুলে ভরা বাগান, ফোয়ারা এবং আয়নাখচিত দেয়াল মিলিয়ে এটি যেন রাজস্থানের কোনও প্রাসাদের শিশমহলকে মনে করিয়ে দেয়। প্রবেশদ্বারেই রয়েছে বিশাল অলঙ্কৃত ফটক।

৫) শহরকে জানার নতুন ঠিকানা—অপরিচিত কলকাতার পথ ধরে হাঁটা

এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, পুরনো বাজার, ঘাট, গির্জা, পরিত্যক্ত প্রাসাদ আর বহু লুকোনো ইতিহাস—যা অনায়াসেই একদিনের ভ্রমণের সৌন্দর্য বাড়াতে পারে। শীতের সকালে শহর জেগে ওঠে এক অন্য রূপে। একটু থেমে হাঁটলে সেই মায়াবি কলকাতাকে নতুন করে চিনতে পারবেন।

শীতকে সঙ্গী করে নতুন ভাবে দেখুন শহরটাকে

এ বছর ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে নিজের শহরকেই নতুন চোখে দেখুন। পরিবারের সঙ্গে হোক বা একলা, এই স্থানগুলো কলকাতার রূপকে অন্য মাত্রা দেবে—অচেনা অথচ নিজের মতোই আপন।