এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে নতুন জট!
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা নিয়ে ফের দেখা দিল অনিশ্চয়তা। বেশ কয়েক দফা পরিকল্পনা পরিবর্তনের পরও আগামী রবিবার তাঁর ঢাকা ছাড়ার সম্ভাবনা কার্যত বাতিল হয়ে গিয়েছে। শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স সংক্রান্ত জটিলতাই এবার যাত্রা পিছোনোর প্রধান কারণ বলে জানা গেছে।
বিএনপি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, কাতারের আমির ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাচ্ছেন খালেদাকে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, শনিবার রাতেই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ঢাকায় নামবে এবং রবিবার সকালেই প্রবীণ নেত্রীকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে উড়ে যাবে। কিন্তু শুক্রবার রাতেই সব হিসেব ওলটপালট হয়ে যায়। কাতারের বিমানটি নির্ধারিত সময়ে পৌঁছোতে পারেনি, বরং জানা যায়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তা আকাশে তুলতেই পারেনি।
এই পরিস্থিতিতে কাতার সরকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জার্মানি থেকে জরুরি ভিত্তিতে আর একটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেছে। সেটি ঢাকায় পাঠানোর চেষ্টা চলছে। তবে নতুন বিমানের আগমনের সম্ভাব্য সময় এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার লন্ডনযাত্রার যে সম্ভাব্য নতুন তারিখ শোনা যাচ্ছে, সেটিও পরিস্থিতিভেদে আরও পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, আগের যে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল, তা ৬ ডিসেম্বর নয়, সম্ভবত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় নামতে পারে। সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তার ঘোর কাটছে না।
প্রথম আলো–সহ একাধিক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, স্থানীয় কাতার দূতাবাসও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, খালেদার শারীরিক অবস্থার গুরুত্ব বিবেচনা করে কাতারের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ে বিকল্প বিমান পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনায় নিরাপত্তা বিধি কঠোর হওয়ায় কোনও ঝুঁকি নিয়ে ত্রুটিপূর্ণ বিমান উড়িয়ে পাঠানোর প্রশ্নই ওঠে না।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জন আত্মীয় ও চিকিৎসক লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন পরিস্থিতিতে সেই সংখ্যা কমিয়ে আনা হতে পারে। বিএনপি সূত্রের মতে, বেশ কয়েকজন আলাদাভাবে বাণিজ্যিক বিমানে লন্ডন পৌঁছোবেন।
গত ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে গুরুতর শ্বাসকষ্ট-সহ নানা উপসর্গ নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর নিউমোনিয়া ধরা পড়ে, পাশাপাশি আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হৃদ্যন্ত্রেও সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তাঁকে দীর্ঘ আন্তর্জাতিক যাত্রার উপযোগী করতে দেশের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি বিদেশি চিকিৎসকরাও চিকিৎসা দিচ্ছেন।
চিকিৎসক দলের একাংশের মত, লন্ডনে বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন হলেও যাত্রাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের কোনও সামান্যতম ত্রুটিও উপেক্ষা করা যাবে না। ফলে যতোক্ষণ পর্যন্ত নির্ভুল ও প্রস্তুত বিমান পাওয়া না যায়, ততক্ষণ যাত্রা পিছোবে—এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, নেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। খালেদার পরিবার ও দল শুধু চান, তিনি নিরাপদে বিদেশে পৌঁছে উন্নত চিকিৎসা নিন। কিন্তু ঘন ঘন যাত্রা পিছোনোয় উদ্বেগ বাড়ছে সমর্থকদের মধ্যেও।
সব মিলিয়ে এখন প্রশ্ন একটাই—কবে সত্যিই উড়ান ধরতে পারবেন খালেদা জিয়া? এর উত্তর নির্ভর করছে কাতারের পাঠানো বিকল্প এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ঠিক কখন ঢাকায় পৌঁছোবে তার উপরেই।

