নতুন নিয়মে আমানতকারীর দুশ্চিন্তা বাড়ছে?
বছরের শেষে এসে দেশের আমানতকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে ফিক্সড ডিপোজিট— দুই ক্ষেত্রেই একাধিক নিয়ম বদলে যাচ্ছে। বিশেষত, আগাম স্থায়ী আমানত ভাঙলে যে নতুন শর্ত আরবিআই জারি করেছে, তা সাধারণ গ্রাহকের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। কারণ নতুন বিধিতে বলা হয়েছে, এফডি পরিপক্ক হওয়ার আগে ভাঙলে গ্রাহক শূন্য সুদ পর্যন্ত পেতে পারেন।
সেভিংস অ্যাকাউন্টে তিন নতুন নিয়ম
আরবিআই জানিয়েছে, সেভিংস অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমার ক্ষেত্রে দেশের সব ব্যাঙ্কই একই হারে সুদ দেবে। অর্থাৎ, গ্রাহক যে ব্যাঙ্কেই অ্যাকাউন্ট খুলুন না কেন—এসবিআই, আইসিআইসিআই অথবা অন্য কোনও বেসরকারি ব্যাঙ্ক—এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদের হিসাব একটাই হবে।
আগে একাধিক ব্যাঙ্ক উচ্চ সুদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন গ্রাহক টানত। অর্থনীতির নিয়ম উপেক্ষা করার অভিযোগও উঠত। তাই এবার আরবিআই সুদের হারে একরূপতা আনায় ব্যাঙ্কগুলির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত হল।
পাশাপাশি, সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ গণনা হবে দৈনিক জমা টাকার ভিত্তিতে—দিনশেষে অ্যাকাউন্টে যত টাকা থাকবে, তার ওপর ওই দিনের সুদ হিসাব করবে ব্যাঙ্ক।
এ ছাড়া প্রতি তিন মাসে এক বার সেভিংস অ্যাকাউন্টের মূল টাকার সঙ্গে সুদ যুক্ত হবে। তবে এই নিয়ম শুধুমাত্র এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমায় প্রযোজ্য। তার বেশি হলে ব্যাঙ্কভেদে সুদের হার আলাদা হতে পারে।
এফডিতে শূন্য সুদের ঝুঁকি!
স্থায়ী আমানতের উপর ভারতের মানুষের নির্ভরতা দীর্ঘ দিনের। কারণ এখানে বাজারের ঝুঁকি নেই এবং নির্দিষ্ট সুদে টাকা বাড়ে। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই মেয়াদের আগেই এফডি ভাঙেন—যা এখন বিপদ ডেকে আনতে পারে।
নতুন নিয়মে বলা হয়েছে—
- এফডি ভাঙলে কত সুদ কাটা হবে বা জরিমানা কত—ব্যাঙ্ককে আগাম লিখিতভাবে জানাতে হবে।
- কোনও ব্যাঙ্ক চাইলে আগাম ভাঙলে সুদ না-ও দিতে পারে! তবে এই শর্ত এফডি খোলার সময় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
এছাড়া, দেশের সব ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানতের ন্যূনতম মেয়াদ ৭ দিন করা হয়েছে। এফডির মেয়াদ শেষের দিনে ছুটি থাকলে পরের দিন গ্রাহককে সুদসহ টাকা দিতে হবে—অতিরিক্ত একদিনের সুদসহ।
আরও একটি বড় পরিবর্তন—অটো-রিনিউয়াল আর করা যাবে না। অর্থাৎ, এফডির মেয়াদ শেষ হলে গ্রাহক টাকা তুলতে না এলে তা আর নতুন এফডিতে রূপান্তর হবে না। সেক্ষেত্রে সেভিংস বা টার্ম ডিপোজিট—যেখানে সুদ কম—সেই অনুযায়ী সুদ পাবেন আমানতকারী।
স্থায়ী আমানতে নতুন গ্রাহক আনতে ব্যাঙ্কগুলি যে উপহার বা লটারি অফার দিত, আরবিআই সেটিও বাতিল করেছে। নিয়মভঙ্গ করলে ব্যাঙ্ককে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
গৃহঋণে নতুন সুবিধা
আরবিআইয়ের নতুন নির্দেশিকা গৃহঋণ গ্রহীতাদের জন্যও কিছু স্বস্তি এনেছে। আগে তিন বছর অন্তর ‘স্প্রেড’ সংশোধন করা যেত। এখন ক্রেডিট স্কোর উন্নত হলে তিন বছর অপেক্ষা না করেই সংশোধনের আবেদন করা যাবে। এতে সুদের হার কমে মাসিক কিস্তিও হালকা হতে পারে।
গৃহঋণের মেয়াদ সাধারণত ২০–২৫ বছর। ফলে সুদের সামান্য হ্রাসেও বড় অঙ্কের সঞ্চয় হতে পারে।

