🌍 পুতিনের জন্য মোদীর ছ’ছটি বিশেষ উপহার: অসম, কাশ্মীরের পাশাপাশি জায়গা পেল বাংলার ঐতিহ্যও

পুতিনের জন্য মোদীর ছ’ছটি বিশেষ উপহার

ভারত–রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার রাতে প্রোটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে বিমানবন্দরে গিয়ে পুতিনকে স্বাগত জানান— যা দুই দেশের সৌহার্দ্যের গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করে। তবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার তালিকাই এবার বিশেষ নজর কেড়েছে। ছ’টি নির্বাচিত উপহারের মধ্যে রয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির স্পষ্ট ছাপ, যার মধ্যে জায়গা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরও এক বহুমূল্য শিল্পসামগ্রী।

পুতিনকে দেওয়া উপহারের তালিকায় প্রথমেই নজর কাড়ে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার রাশিয়ান অনুবাদ। মোদী নিজেই সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, মহাভারতের যুদ্ধের প্রাক্কালে অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণের কথোপকথন— যা গীতায় অমর হয়ে আছে— সেই দার্শনিক শিক্ষা বন্ধুর হাতে তুলে দিতে পেরে তিনি গর্বিত। উপহার দেওয়ার মুহূর্তের ছবিও পোস্ট করেন প্রধানমন্ত্রী।

অসমের বিখ্যাত চা এবং কাশ্মীরের উৎকৃষ্ট মানের জাফরানও মোদীর উপহারের ঝুলিতে ছিল। ভারতীয় কৃষি ও মশলার ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার ক্ষেত্রে এই উপহারগুলির তাৎপর্য অপরিসীম। তবে উপহারের তালিকায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী রুপোর কারুকাজ। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে তৈরি এক অসাধারণ রুপোর টি-সেট পুতিনকে উপহার দেন মোদী। কেটলি, কাপ, দুধের পাত্র, চিনির পাত্র— সবকিছুতেই মুঘল প্রভাবিত সূক্ষ্ম কারুকাজ ফুটে ওঠে। বহু শতাব্দীর সমৃদ্ধ শিল্পপরম্পরা বহনকারী এই বিশেষ রূপোর সামগ্রী রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের জন্য নিখুঁত পছন্দ বলে মনে করছেন শিল্প–ইতিহাসবিদরা।

এছাড়াও, মহারাষ্ট্রে নির্মিত একটি রূপোর ঘোড়া এবং আগরার মার্বেলের দাবার সেটও উপহার হিসেবে তুলে দেন মোদী। দাবার এই নিখুঁত মার্বেল শিল্পরূপ আগরার পাথর–শিল্পের অনন্য পরিচয় বহন করে। উল্লেখযোগ্য, দাবার উৎপত্তি ভারতেই— তাই আন্তর্জাতিক মঞ্চে ঐতিহ্যের বার্তা দিতেও এই উপহারে প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের মার্চ–এপ্রিল মাসে অসম ও পশ্চিমবঙ্গ— দুই রাজ্যেই বিধানসভা নির্বাচন। ফলে এই দুই রাজ্যের সাংস্কৃতিক সামগ্রী উপহারের তালিকায় রাখার পিছনে রাজনৈতিক কৌশলও থাকতে পারে। উপহার তালিকার মাধ্যমে কেন্দ্র সরকারের ‘এক দেশ–বহু সংস্কৃতি’ নীতি আরও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

গত কয়েক বছরে ভারত–রাশিয়া সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। রাশিয়ার তেল আমদানির কারণে আমেরিকা ভারতের রপ্তানি পণ্যে ৫০% শুল্ক বসালেও দিল্লি পিছিয়ে আসেনি। পুতিনও দিল্লিতে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন তুলেছেন— “যখন আমেরিকাই রাশিয়ার তেল কেনে, তখন ভারতের আপত্তি কোথায়?” তাই এই সফর দুই দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কে নতুন দিক তৈরি করবে বলেই ধারণা।

পুতিন–মোদী দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা— সব ক্ষেত্রেই নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত মিলেছে। আর উপহারের ঝুলিতে ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তুলে ধরায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে মোদীর ব্যক্তিগত স্টাইলও আরও একবার নজর কাড়ল।