🔶 ব্ল্যাকমেল, বিজেপির তাঁবেদারি ও রাজনৈতিক হিসেব—হুমায়ুনকে শাস্তি দিয়ে তৃণমূলের কৌশল স্পষ্ট করলেন মমতা

ব্ল্যাকমেল, বিজেপির তাঁবেদারি ও রাজনৈতিক হিসেব!

ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে কেন্দ্র করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছিল, তার পরিপূর্ণ সমাপ্তি ঘটল বৃহস্পতিবার। যদিও তৃণমূল তাঁকে বহু দিন ধরেই গুরুত্ব না-দেওয়ার চেষ্টা করছিল, তবে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় উপস্থিত থাকাকালেই তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করার ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর থেকেই রাজনীতির অন্দরে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে।

ঘটনা পরম্পরা: শাস্তির সিদ্ধান্তের পিছনের রাজনৈতিক ব্যুৎপত্তি

প্রথম ঘটনা—মঙ্গলবার মালদহ থেকে বহরমপুর ফেরার পথে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতার সামনে হুমায়ুনের প্রসঙ্গ উঠতেই বিরক্তি প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও উদ্দেশ্য ছিল চাকরি মামলা নিয়ে আদালতের রায়, তবু হুমায়ুন-প্রশ্নে তিনি স্পষ্টতই বিরক্ত হন।

দ্বিতীয় ঘটনা—বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফিরহাদ হাকিমের সাংবাদিক বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয় হুমায়ুনের সাসপেনশন। সেই সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন মমতার সভাস্থলে। খবর পেয়েই সভা থেকে বেরিয়ে যান।

তৃতীয় ঘটনা—দুপুরে বহরমপুরের সভামঞ্চে উঠে নাম না–করে তীব্র ভাষায় হুমায়ুনকে আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, ‘‘ভোটের আগে অনেকে ব্ল্যাকমেল করে। বিজেপির টাকা খেয়ে তাঁবেদারি করে। তাদের বিশ্বাস করবেন না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা ছিল একেবারে স্পষ্ট—দলের ভিতরে বিজেপির মদতপুষ্ট কেউ থাকলে তার ফল ভুগতে হবে।

হুমায়ুনের ‘নতুন দল’–বার্তা এবং তৃণমূলের সময়-নির্বাচনের কারণ

গত দেড় মাস ধরেই হুমায়ুন বারবার বলেছেন যে তিনি নতুন দল গঠন করবেন। এমনকি ১৩৫টি আসনে প্রার্থী দেবে তাঁর দল—এমন ঘোষণাও করেছেন। এর মাঝেই বাবরি মসজিদের আদলে নতুন মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কর্মসূচি নিয়েছেন ৬ ডিসেম্বর।
তৃণমূলের অন্দরের মতে, ঠিক এই কারণেই শাস্তির ঘোষণা আরও জরুরি হয়ে উঠেছিল।
১. মমতা জেলায় থাকাকালীন শাস্তির সিদ্ধান্ত জানানো, যাতে বার্তা স্পষ্ট এবং দৃঢ় হয়।
২. ৬ ডিসেম্বরের ‘ধর্মীয় সুড়সুড়ি’-পূর্ণ অনুষ্ঠানের আগে দলীয় পরিচয় মুছে দেওয়া, যাতে তৃণমূলকে বিতর্কে টেনে না–হওয়া যায়।

দলের একাংশের বক্তব্য, হুমায়ুন বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে বিভাজন আনাই তাঁর উদ্দেশ্য। ফলে তাঁকে ‘উদাহরণ’ হিসেবে দেখানো ছাড়া তৃণমূলের আর উপায় ছিল না।

ববি-কে দিয়ে ঘোষণার কারণ: সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখার কৌশল

হুমায়ুন একজন সংখ্যালঘু নেতা। তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত যাতে ভুল ব্যাখ্যা তৈরি না করে, সেজন্যই সংবাদমাধ্যমের সামনে ঘোষণার দায়িত্ব দেওয়া হয় ফিরহাদ হাকিমকে—যিনি নিজেও সংখ্যালঘু সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য মুখ। তাঁর পাশে ছিলেন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের দুই বিধায়কও। এটি ছিল সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক পদক্ষেপ।

ওয়াকফ ইস্যু ও সম্ভাব্য অশান্তির ইঙ্গিত

কেন্দ্রীয় ওয়াকফ পোর্টালে সম্পত্তির নথিভুক্তির নির্দেশকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু মহলে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মমতা বহরমপুরের সভা থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—‘‘ভুয়ো খবর ছড়িয়ে মুর্শিদাবাদে অশান্তি পাকানোর ছক চলছে।’’ তাঁর অভিযোগ, বিজেপির ‘গদ্দার’রা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।