রায়পুরে উধাও ‘অধিনায়ক রোহিত’!
রাঁচীতে যিনি ছিলেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া রোহিত শর্মা, রায়পুরে তাঁকে যেন চিনতেই পারল না ভারতীয় ক্রিকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ এক দিনের ম্যাচে মাঠে উপস্থিত থাকলেও রোহিত ছিলেন অনেকটাই নীরব, অনেকটাই পিছু হটা—যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছে তাঁর আক্রমণাত্মক নেতৃত্বের ছাপ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে—বোলিং পরিবর্তন, ফিল্ড সেটিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তিনি কেন অংশ নিলেন না? এর নেপথ্যে কি প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরের কোনও নির্দেশ? নাকি ব্যাট হাতে বড় রান না পাওয়ার হতাশাই তাঁকে আড়ালে ঠেলে দিল?
রাঁচীতে দৃশ্য ছিল একেবারে উল্টো। সেখানে লোকেশ রাহুল আনুষ্ঠানিক অধিনায়ক হলেও, চাপের মুহূর্তে রোহিতই নেতৃত্বের ভার নিজের হাতে তুলে নেন। বোলারদের সঙ্গে পরামর্শ, ফিল্ডারদের জায়গা বদল—সবটাই করছিলেন তিনি। কিন্তু রায়পুরে সেই দায়িত্ব একেবারেই নিলেন না। শুধু মিড-অফে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝে বোলারদের সঙ্গে কয়েকটি কথা—সেই পর্যন্তই তাঁর ভূমিকা সীমাবদ্ধ ছিল।
ইতিমধ্যেই জানা যাচ্ছে, রাঁচীর ম্যাচে রোহিতের এই ‘অতিরিক্ত নেতৃত্ব’ নাকি পছন্দ হয়নি কোচ গম্ভীরের। রোহিতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় গম্ভীরের মুখের অভিব্যক্তি দেখেই অনেকে বুঝেছিলেন, যে অধিনায়কত্ব তিনি রাহুলকে দিয়েছেন, সেটি রোহিত নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন—এটিকে ভাল চোখে দেখেননি কোচ। সেই ম্যাচের পর গম্ভীর কি কোনও কঠোর বার্তা দিয়েছেন? রায়পুরে রোহিতের চুপ করে থাকা দেখে সেই জল্পনাই আরও জোরালো হয়েছে।
তবে ম্যাচের শুরুটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। টসের আগে দলের সবাইকে পেপ টক দিচ্ছিলেন রোহিত—যা দেখে স্পষ্ট, শুভমন গিল না থাকায় হয়তো আবারও নেতৃত্ব নিতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু ব্যাট হাতে ব্যর্থতা যেন বদলে দিল সমস্ত চিত্র। মাত্র ৮ বলে ১৪ রান করে ফেরেন রোহিত। অন্যদিকে কোহলি করলেন ঝকঝকে শতরান। রোহিতের সামনে এখন ২০২৭ বিশ্বকাপ দলে জায়গা ধরে রাখার লড়াই—প্রতিটি ম্যাচ যেন তাঁর জন্য পরীক্ষা। এই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁর মনোযোগ নষ্ট হয়েছে কি? সেই কারণেই কি ফিল্ডিংয়ে দেখা গেল না তাঁর আগের মতো উচ্ছ্বাস?
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শুরুর আগে পেপটক দিলেন রাহুলই। মাঠে সিদ্ধান্তও নিলেন তিনি। রোহিতকে দেখা গেল শুধু পাশে দাঁড়িয়ে থেকে কিছু নির্দেশ দিতে—কিন্তু নেতৃত্বের ভার নিজের কাঁধে তুলতে একেবারেই অনিচ্ছুক।
কোচ গম্ভীরের অধীনে দল গঠনের নীতি স্পষ্ট—তারকার চেয়ে নতুনদের গুরুত্ব বেশি। বিরোধিতা তিনি পছন্দ করেন না। রোহিত-কোহলির সঙ্গে তাঁর অতীতে সম্পর্ক খুব একটা মসৃণ ছিল না। এই পরিস্থিতিতে রোহিত যে ‘নেতা’ হয়ে উঠবেন, তা কি মেনে নিতে পারেন গম্ভীর? রায়পুরে ঘটনাগুলি সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে।
রোহিতের অভিজ্ঞতা, তাঁর বোলিং পরিবর্তনের দক্ষতা ভারতের বহু ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। রাঁচীর জয়ের কৃতিত্বও অনেকটাই তাঁর। রায়পুরে দেখা গেল—শিশির নেমে যাওয়ার পর রাহুলের কাছে কোনও প্ল্যান বি নেই। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ লাগাতার রান দিলেও তাঁকে দিয়েই ওভার করালেন রাহুল। বিকল্প কৌশলের অভাব ভুগিয়েছে ভারতকে। যদি রোহিত এগিয়ে এসে পরিকল্পনা সাজাতেন, ফল কি বদলাতে পারত? সম্ভবত, হ্যাঁ।

