Thursday, December 4, 2025

পরিবারের ভবিষ্যৎ-সুরক্ষায় বড় সিদ্ধান্ত: প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বহাল রাখল হাই কোর্ট

Share

প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বহাল রাখল হাই কোর্ট!

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে অবশেষে গুরুত্বপূর্ণ মোড়। প্রায় নয় বছর আগে নিয়োগ পাওয়া ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত জানাল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া চাকরি-রদ সংক্রান্ত নির্দেশ বুধবার বাতিল করে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের বেঞ্চ জানায়— দুর্নীতি থাকলেও এত বছর ধরে কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি বাতিল করলে তাঁদের পরিবার মারাত্মক বিপদের মুখে পড়বেন, তাই মানবিকতাই এই রায়ের মূল ভিত্তি।

এই রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাথমিক শিক্ষকদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তে দেখা যায়। নয় বছরের অনিশ্চয়তা শেষে তাঁরা পেলেন স্থায়ী স্বস্তি।


টেট উত্তীর্ণ থেকে নিয়োগ—শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে

২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার জন্য উত্তীর্ণ হয়েছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার প্রার্থী। তাঁদের ইন্টারভিউ ও অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। সেই বছরই পর্ষদ শুরু করে নিয়োগপ্রক্রিয়া এবং প্রায় ৪২,৫০০ শিক্ষককে নিয়োগ দেয়।

এই নিয়োগ থেকেই শুরু হয় বেনিয়মের অভিযোগ। ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী আদালতে দাবি করেন—নিয়োগে নিয়ম মানা হয়নি, অনেক প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী কম নম্বর পেয়ে চাকরি পেয়েছেন। পাশাপাশি অভিযোগ ওঠে, বহু ক্ষেত্রেই অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি, কোথাও আবার অতিরিক্ত নম্বরও দেওয়া হয়েছে।


দুর্নীতি, জালিয়াতির অভিযোগে নড়ে ওঠে পর্ষদ

মামলার শুনানিতে উঠে আসে টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রির অভিযোগ। সিবিআই ও ইডির তদন্তে উঠে আসে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য-সহ কয়েকজনের নাম।

ইন্টারভিউ নেওয়া একাধিক আধিকারিককে গোপনে জবানবন্দিও নথিবদ্ধ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে তিনি ২০২৩ সালের মে মাসে নির্দেশ দেন—
৪২,৫০০ জনের মধ্যে প্রশিক্ষণহীন প্রায় ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিল করতে হবে।

সঙ্গে বলা হয়, চার মাস পর্যন্ত তাঁরা পার্শ্বশিক্ষকের সমতুল বেতনে স্কুলে যাবেন এবং রাজ্যকে তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ শুরু করতে হবে।


সিঙ্গল বেঞ্চ বনাম ডিভিশন বেঞ্চ—আইনি টানাপোড়েন

পর্ষদ এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে গেলে প্রথমে সিঙ্গল বেঞ্চের আদেশে স্থগিতাদেশ জারি হয়। পাশাপাশি নতুন নিয়োগ শুরুর নির্দেশ বহাল থাকে।

এরপর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়—সব পক্ষের বক্তব্য শুনে হাই কোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেবে। সেইমতো বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত মিত্রের বেঞ্চে মামলার শুনানি চলে এবং ১২ নভেম্বর শুনানি শেষ হয়।

চাকরিহারাদের পক্ষের দাবি ছিল—তাঁরা নিজেদের বক্তব্য স্পষ্টভাবে রাখার সুযোগ পাননি। অপরদিকে রাজ্য সরকারের বক্তব্য—যে অল্প কিছু অনিয়ম হয়েছিল, সেগুলি সংশোধন করা হয়েছে।


চূড়ান্ত রায়: “অমিত দুর্নীতি হলেও চাকরি বাতিল নয়”

বুধবার ডিভিশন বেঞ্চ জানায়—

  • নিয়োগে অনিয়ম ছিল,
  • নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে,
  • অ্যাপটিটিউড টেস্টে ভুল হয়েছে,
    তবুও চাকরি বাতিল করলে বহু পরিবার বিপর্যস্ত হবে।

বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ—
“৩২ হাজার শিক্ষক এত দিন শিশুদের পড়িয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অন্যায়ের অভিযোগ নেই। তাঁদের পরিবারও তাঁদের উপর নির্ভরশীল। তাই মানবিকতায় চাকরি বাতিল করা যাচ্ছে না।”

এ রায়ে স্পষ্ট—দুর্নীতি ও অনিয়ম আলাদা, কিন্তু তার দায় শিক্ষকদের ওপর চাপানো যাবে না।

Read more

Local News