আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন?
আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ছোট ছোট মানববিহীন উড়ুক্কু যান—ড্রোন—আরো ঘনঘন ব্যবহার হওয়ায় এখন তা প্রতিরক্ষার নতুন সমস্যা। সীমান্তে এক ঝাঁক ড্রোন নেমে এলে তা সামরিক ঘাঁটিতে বড় অস্থিরতা তৈরি করতে পারে; গুপ্তচরবৃত্তি, বিস্ফোরক বহন বা আত্মঘাতী আক্রমণ—সবই করা সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে কেবল স্থাপিত রাডার বা গ্রাউন্ড-টিএওইচ সিস্টেম নিয়ে কাজ হল না। তাই শহর বনাম সীমান্ত—দুই ক্ষেত্রেই মোবাইল সলিউশন দরকার হয়ে উঠেছে। সেই চাহিদার প্রতিত্তরে এসেছে দেশীয় ইন্ডাস্ট্রির তৈরি ‘ইন্দ্রজাল রেঞ্জার’—চলন্ত এন্টি-ড্রোন প্ল্যাটফর্ম।
ইন্দ্রজাল রেঞ্জারটি মূলত একটি হাইলাক্স পিকআপ ভিত্তিক মোবাইল ভেহিকেল, যাতে একযোগে ৪৪টি মোবিলিটি মডিউল সাজানো হয়েছে। গাড়ি চলতে চলতেই আশে পাশের আকাশে থাকা ড্রোন শনাক্ত করে, তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করে এবং প্রয়োজন হলে নিস্তেজ বা দখল করার প্রযুক্তি প্রয়োগ করে। রেঞ্জারের প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে — জিএনএসএস স্পুফিং সনাক্তকরণ, আরএফ জ্যামিং ইউনিট, সাইবার টেকওভার মডিউল এবং একটি স্প্রিং-লোডেড কিল-সুইচ। সংক্ষিপ্ত পাল্লায় (১–২ কিমি) ড্রোনকে সরাসরি নিধন করতে সক্ষম; ৩ কিমি পর্যন্ত জ্যামিং জাল ছুঁড়ে ড্রোনকে কার্যকারণে আনতে পারে। আর শনাক্তকরণ সীমা ছয় থেকে দশ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত রাখতে পারে বলা হচ্ছে।
বড় সুবিধা হলো—গাড়িটিকে থামানোর প্রয়োজন নেই। কনভয়ের গতি বজায় রেখে চলতে চলতেই রেঞ্জার চারপাশের আকাশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেখানে স্থির সি-ইউএএস (CUAS) ইনস্টলেশন চলে না বা সীমিত কাজ করে—অসুবিধাজনক ভূখণ্ড, পাহাড়ী পাস, শুটিং কনভয় বা তৎক্ষণিক মোবাইল টহল—এখানেই চলমান আর্মাডা হিসেবে রেঞ্জার ব্যবহার করা যাবে। ডিআরডিওর সঙ্গে অংশীদারীত্বে তৈরি এই প্রযুক্তি উদ্বুদ্ধ করেছে প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের—কারণ এটি আর্কিটেকচারে সহজ, দ্রুত মোতায়েনযোগ্য এবং তুলনামূলক ভাবে সাশ্রয়ী।
ইন্দ্রজাল রেঞ্জারের মস্তিষ্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিদ্ধান্ত-গ্রহণেও স্বয়ংক্রিয়তা বজায় রাখে; এজন্য অপারেশনাল সিদ্ধান্ত (কখন ড্রোনটি নিধন করা হবে, কখন কেবল কেমিস্ট্রি ছেড়ে কন্ট্রোল পুনরুদ্ধার করা হবে) গ্রহণে কম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কালো–সাদা উভয় পরিস্থিতিতেই কাজ করা যাবে—রাত-দিন, ধুলো-ঝড় বা বৃষ্টিতেও কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য আবহাওয়া-সহনীয় হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হয়েছে।
অন্যদিকে, সীমাবদ্ধতাও রয়েছে—যেখানে ড্রোন চলে যায় ইন্টারসেক্টিং অংশের বাইরে বা খুব দূরত্বে দিক বদলে নেয়, সেখান থেকে কিছুটা অকেজো হতে পারে প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মতোই। তবু হাইলাক্সের মোবাইলিটি, স্বনির্ভর সিস্টেম এবং কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ইন্দ্রজালকে আদর্শ মোবাইল কাঠামো বানিয়েছে। একাধিক রেঞ্জার মিলে বড় সিকিউরিটি বেল্ট তোড়া সম্ভব—সেই ছবিই সীমান্ত নিরাপত্তার নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রযুক্তি খাতের তরুণ স্টার্টআপ এবং ডিফেন্স রিসার্চ সংস্থার সহযোগিতায় দ্রুত প্রোটোটাইপ তৈরির কাজ হয়েছে। বর্তমানে ফিল্ড-টেস্ট চলার মধ্যেই রয়েছে এবং দ্রুত মোতায়েনের জন্য সেনাবাহিনীর কনভয়, সীমান্ত আউটপোস্ট ও শহর রক্ষা ইউনিটে রেঞ্জারের প্রাথমিক মোড়ক আশা করা হচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন—ড্রোন-হুমকি ক্রমশ সুষম হচ্ছে; ফলে গতিশীল, বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী এ জাতীয় সমাধান দেশীয় দিক থেকে বড় সংযোজন। বনাম পাক ও চিন—যাদের ড্রোন ব্যবহারও বাড়ছে—নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা তালিকায় ইন্দ্রজাল রেঞ্জার এক শক্তিশালী তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে।

