🔶 ‘ব্যাপক অনিয়ম প্রমাণিত নয়’— ডিভিশন বেঞ্চে খারিজ অভিজিতের নির্দেশ, বহাল থাকল ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ

ডিভিশন বেঞ্চে খারিজ অভিজিতের নির্দেশ, বহাল থাকল ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ!

রাজ্যের বহুল আলোচিত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় বড় মোড়। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ পুরোপুরি খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রায় নয় বছর ধরে যে শিক্ষকরা স্কুলে পাঠদান করছেন, তাঁদের চাকরি বহাল রাখাই যুক্তিযুক্ত— এমনই মত বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের। ১৪১ পৃষ্ঠার বিস্তারিত রায়ে আদালত জানায়, দুর্নীতি-অভিযোগ আংশিকভাবে সত্য হলেও, তা ‘ব্যাপক অনিয়ম’-এর পর্যায়ে পড়ে না। ফলে একসঙ্গে ৩২ হাজার শিক্ষককে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া ন্যায়সঙ্গত নয়।

বুধবারের রায়ের পর গোটা রাজ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে। দার্জিলিঙ থেকে হুগলি— নানা জায়গায় শিক্ষকরা মিষ্টিমুখ করেন, প্রকাশ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।

🔸 অভিজিতের আগের রায়ে কী ছিল?

ডিভিশন বেঞ্চ তাদের রায়ে উল্লেখ করেছে, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশে কয়েকটি গুরুতর অনিয়মের কথা তুলে ধরেছিলেন—

• প্রাথমিক নিয়োগে কোনও অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি, অথচ নম্বর দেওয়া হয়েছে।
• ইন্টারভিউ বোর্ড তৈরি হয়নি। যাঁরা ইন্টারভিউ নিয়েছেন, তাঁদের আনুষ্ঠানিক নিয়োগপত্রও ছিল না।
• নম্বর প্রদানের নির্দেশিকা না থাকায় ইন্টারভিউ মূল্যায়ন ছিল “সম্পূর্ণ অবাস্তব”।
• সিবিআই ও ইডির তদন্তে দুর্নীতির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে— এমন দাবি ছিল।
• সংরক্ষিত শ্রেণির কয়েকজন বেশি নম্বর পেয়েও সাধারণ তালিকায় জায়গা পাননি।
• প্রাথমিক পর্ষদ নির্বাচন কমিটি গঠন না করে বাইরের সংস্থার হাতে নিয়োগের দায়িত্ব দেয়।
• অভিযোগ ছিল, টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়গুলির ভিত্তিতেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৩২ হাজার নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

🔸 কিন্তু কেন সেই নির্দেশ খারিজ করল ডিভিশন বেঞ্চ?

ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে—
অনিয়ম হলেও তা ব্যাপক অনিয়ম বা সার্বজনীন জালিয়াতি হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। আদালত বলেছে:

• ৯ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন প্রার্থীরা। চাকরি বাতিল করলে শুধু তাঁদের নয়, তাঁদের পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
• কোনও শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে অপরাধী নন। অভিযোগ পর্ষদের বিরুদ্ধে।
• ন্যায়বিচারের সময় আদালতকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হয়।
  আদালত নিজেদের মত দিয়ে নতুন নীতি তৈরি করতে পারে না।
• সমস্ত চাকরি বাতিল করার মতো সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই যে পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল।
• মামলাকারীরা ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ বা অ্যাপটিটিউড টেস্ট সংক্রান্ত অভিযোগ যথেষ্টভাবে প্রমাণ করতে পারেননি।

ডিভিশন বেঞ্চ আরও বলে, আদালত তখনই কঠোর ব্যবস্থা নেবে যখন স্পষ্টভাবে প্রমাণ হবে যে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন— যা এই মামলায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

🔸 আদালতের মানবিক যুক্তি

রায়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—
“আট-ন’ বছর ধরে যারা দায়িত্ব পালন করছে, কোনও ব্যক্তিগত ত্রুটির অভিযোগ নেই, হঠাৎ করে তাঁদের চাকরি কেড়ে নেওয়া ন্যায়সংগত নয়।”

অর্থাৎ, নিয়োগপদ্ধতিতে ত্রুটি থাকলেও শিক্ষকদের দোষ নেই, তাই চাকরি বজায় রাখাই যুক্তিযুক্ত।