🌄 বামঘাঁটিতে পদ্মের চমক: কেরলের পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির সনিয়া গান্ধী প্রার্থী হয়ে হইচই

বামঘাঁটিতে পদ্মের চমক

কেরলে পঞ্চায়েত ভোট ঘিরেই বরাবরই উত্তেজনা প্রবল। বামেদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এই রাজ্যে বিজেপির জায়গা করে নেওয়া সহজ নয়। তার মধ্যেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ল গরম হাওয়া। কারণ তালিকার একেবারে উপরে যে নামটি চোখে পড়েছে, তা হল— সনিয়া গান্ধী। তবে এই সনিয়া কোনও ভাবেই কংগ্রেস সভানেত্রী নন, বরং মুন্নারের পাহাড়ি অঞ্চলের এক তরুণ বিজেপি নেত্রী।

নাল্লাথান্নি কাল্লার অঞ্চলে বসবাসকারী ৩৪ বছরের সনিয়া গান্ধী স্থানীয় মানুষদের কাছে নতুন নন। তাঁকে ঘিরে বরাবরই কিছুটা কৌতূহল ছিল। কারণ তাঁর নামটি যে ঠিক একই রকম ভাবে রাখা হয়েছিল ভারতের অন্যতম বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর নামানুসারে। তাঁর বাবা দুরাই রাজ দীর্ঘ দিন কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র সক্রিয় নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক আনুগত্য ও শ্রদ্ধা থেকেই মেয়ের নাম রেখেছিলেন “সনিয়া গান্ধী”।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সনিয়ার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে থাকে। যুবসমাজের ভাবনা, চিন্তা ও আদর্শের পরিবর্তনের সঙ্গেই বদলায় তাঁর রাজনৈতিক পরিমণ্ডল। ছাত্রজীবনে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরবর্তী সময়ে আরএসএসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে তিনি নতুন মতাদর্শের পথে হাঁটতে শুরু করেন।

এই সময়েই তাঁর জীবনে আসে সুভাষ—আরএসএস ও পরবর্তী সময়ে বিজেপির সক্রিয় কর্মী। দুই পরিবারের সম্মতিতে তাঁদের বিয়ে হয়। আর সেই বিয়ের পরই সনিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টে যায়। তিনি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন এবং স্থানীয় সংগঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন।

মুন্নারের নাল্লাথান্নি কাল্লার অঞ্চলে চা-বাগান শ্রমিকদের লম্বা আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। এখানকার অনেক পরিবার এখনও বামেদের ঐতিহ্যগত সমর্থক। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সনিয়া গান্ধীর বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হওয়া নিঃসন্দেহে এক বড় খবর। সমাজমাধ্যমে তালিকা প্রকাশের পর থেকেই চলছে নানা মন্তব্য, নানা ব্যাখ্যা। অনেকে মজার ছলে লিখেছেন— “কেরলের বামেদের ঘরে এবার বিজেপির সনিয়া গান্ধী ঢুকে পড়লেন!” আবার কেউ কেউ বলেছেন— “রাজনীতিতে নাম মিল থাকলেও আদর্শ মিলতেই হবে, এমন তো নয়!”

স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বেশ আত্মবিশ্বাসী। তাঁদের মতে, সনিয়ার পরিচিতি, নিষ্ঠা ও জনসংযোগ বিজেপিকে পাহাড়ি অঞ্চলে নতুন সম্ভাবনার দিক খুলে দেবে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন কংগ্রেস সমর্থিত পরিবারে বেড়ে ওঠা সনিয়ার বিজেপিতে যোগদানই প্রমাণ করে, কেরলেও গেরুয়া চিন্তার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

অন্য দিকে, বাম ও কংগ্রেস শিবিরে সনিয়াকে নিয়ে কটাক্ষের শেষ নেই। তবে ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, তাঁরা বলছেন— “নাম দিয়ে ভোট জেতা যায় না, কাজ দিয়ে জেতা যায়।”

সনিয়া গান্ধী নিজেও পুরো ঘটনাটি দেখছেন খুবই স্বাভাবিক ভাবে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, “আমার নাম নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, তাতে আমি অবাক নই। ছোটবেলা থেকেই এই নাম শুনে আসছি। কিন্তু আমি আমার নিজের পরিচয় তৈরি করতে চাই— মানুষের জন্য কাজ করেই।”

পাহাড়ি এলাকার চা-বাগান শ্রমিকদের সমস্যা, সঠিক মজুরি, পানীয় জলের অভাব, রাস্তার খারাপ অবস্থা—এই সমস্ত ইস্যুকেই সামনে রেখে প্রচারে নেমেছেন সনিয়া। তাঁর দাবি, “রাজনীতি মানে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমি সেটাই করতে চাই।”

কেরলের বামঘাঁটিতে বিজেপির তরুণ নেত্রীর এই লড়াই কতটা বিন্যাস বদলাতে পারে, তা বলবে ভবিষ্যৎ। তবে সনিয়া গান্ধীর নাম ঘিরে আগ্রহ যে ইতিমধ্যেই ভোটমাঠে নতুন রঙ এনে দিয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।