🔶 নতুন চিকিৎসায় আশার আলো: ওষুধ ছাড়াই দীর্ঘ ১৮ মাস সুস্থ এইডস আক্রান্ত ১০ রোগী! কি তবে খুঁজে মিলল নিরাময়ের দিশা?

ওষুধ ছাড়াই দীর্ঘ ১৮ মাস সুস্থ এইডস আক্রান্ত ১০ রোগী!

এইডস—দীর্ঘদিন ধরেই মানবজাতির অন্যতম ভয়ঙ্কর ও মারণ রোগ। বর্তমানে এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART)–ই একমাত্র বিশ্বস্বীকৃত চিকিৎসা। নিয়মিত ওষুধ না চালালে রোগীর শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত নেমে আসে এবং একে একে শরীর জুড়ে বাসা বাঁধতে থাকে নানা গুরুতর সংক্রমণ। তাই বহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা এমন চিকিৎসা পদ্ধতির সন্ধান করছেন, যাতে এইডস রোগীর স্থায়ী আরোগ্য সম্ভব হয়।
এ বার সেই সন্ধানেই মিলল নতুন আলো। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছেন—প্রায় ১০ জন এইডস আক্রান্ত রোগী টানা ১৮ মাস কোনও ওষুধ না খেয়েও সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন, আর তার কারণ একটি অভিনব কম্বিনেশন থেরাপি।

🔬 নতুন গবেষণা কোন পথে এগোচ্ছে?

সান ফ্রান্সিসকো–স্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণা দল বহুদিন ধরেই এইচআইভি রোগের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের দাবি—পরীক্ষাধীন রোগীদের দেওয়া হয়েছে প্রতিষেধক, ইমিউন–অ্যাকটিভ ওষুধ এবং এক বিশেষ ধরনের ব্রডলি নিউট্রালাইজ়িং অ্যান্টিবডি (bNAbs)।
এই তিনের যৌথ প্রয়োগকেই বিজ্ঞানীরা বলছেন কম্বিনেশন থেরাপি।

যদিও তারা এখনও প্রকাশ্যে আনেননি কোন কোন অ্যান্টিবডি বা ওষুধ ব্যবহৃত হয়েছে, তবে ফলাফল অত্যন্ত উৎসাহজনক।
গবেষকদের বক্তব্য—

• থেরাপি পাওয়ার পর রোগীদের কারওই এআরটি (ART) অর্থাৎ অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি নিতে হয়নি।
• গুরুতর অবস্থায় থাকা রোগীদেরও আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন হয়নি।
• কোনও ওষুধ ছাড়াই ১৮ মাস ধরে শরীরে ভাইরাল লোড নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্থিতিশীল রয়েছে এবং সংক্রমণ দেখা যায়নি।

🦠 এইডস কী ভাবে শরীর আক্রমণ করে?

এইচআইভি সংক্রমণ সাধারণত তিন ধাপে এগোয়—

1. অ্যাকিউট স্টেজ: সংক্রমণের প্রথম দিক—৩–৬ সপ্তাহের মধ্যে জ্বর, সর্দি–কাশির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
2. ক্রনিক বা ল্যাটেন্সি স্টেজ: বহু বছর ধরে রোগ থাকে চাপা, উপসর্গ খুব কম।
3. এডস স্টেজ: শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। যক্ষ্মা, ছত্রাক সংক্রমণ, নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, ক্যানসার ইত্যাদি দেখা দেয়।

এআরটি থেরাপি ভাইরাসের দমন ঘটায়। ওষুধ বন্ধ 하면 ভাইরাল লোড দ্রুত বেড়ে যায়—এটাই সবচেয়ে বড় বাধা।
নতুন থেরাপির সাফল্য এখানেই—ওষুধ বন্ধ থাকার পরও ভাইরাস বাড়ছে না।

🌟 নতুন থেরাপি কি তবে স্থায়ী সমাধান আনতে চলেছে?

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন—এখনই একে ‘চূড়ান্ত নিরাময়’ বলা যাবে না। কারণ—

• রোগীর সংখ্যা এখনও মাত্র ১০ জন।
• দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
• ঠিক কী প্রক্রিয়ায় ভাইরাস দমে যাচ্ছে, তা আরও গবেষণার দাবি রাখে।

তবে, এমন সাফল্য এডস চিকিৎসায় এক বড় মাইলফলক—তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

🩺 ভবিষ্যতের আশা

যদি এই থেরাপি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উপরও একইভাবে কাজ করে—

• রোগীকে প্রতিদিন ওষুধ খেতে হবে না।
• পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমবে।
• দীর্ঘমেয়াদি আরোগ্যের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
• এডস নির্মূল করার লক্ষ্যে বিশ্ব আরও এক ধাপ এগোবে।

গবেষকদের মতে, নতুন থেরাপি যদি প্রমাণিত হয়, তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটবে। বহু কোটি এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের কাছে এটি হতে পারে নতুন জীবনের আশ্বাস।