Wednesday, December 3, 2025

রহস্যবার্তার পর নিখোঁজ, শেষে জঙ্গলে স্যুটকেসে মিলল স্টেফানির দেহ: অস্ট্রিয়ায় নেটপ্রভাবী হত্যায় তোলপাড়

Share

শেষে জঙ্গলে স্যুটকেসে মিলল স্টেফানির দেহ: অস্ট্রিয়ায় নেটপ্রভাবী হত্যায় তোলপাড়

অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় নেটপ্রভাবী স্টেফানি পিপেয়ার—সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি অনুরাগীর হৃদয়জয় করা ৩১ বছরের এই তরুণী—হঠাৎই এক সপ্তাহ আগে নিখোঁজ হয়ে যান। প্রথমে মনে হয়েছিল, তিনি হয়তো কোথাও গিয়েছেন বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর দিকে মোড় নেয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পাশের দেশ স্লোভেনিয়ার ঘন জঙ্গলে একটি স্যুটকেসের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর পচনধরা মৃতদেহ। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই অস্ট্রিয়া জুড়ে নড়েচড়ে বসেছে জনমানস।

স্টেফানির নিখোঁজ হওয়া শুরু হয়েছিল একটি অদ্ভুত হোয়াট্‌সঅ্যাপ বার্তা দিয়ে। ২৩ নভেম্বর রাতে এক পার্টির পর বাড়ি ফিরে তিনি তাঁর বন্ধুদের জানান, কেউ নাকি তাঁকে অনুসরণ করছিল। আরও লেখেন, বাড়ির সিঁড়ির তলায় একজন লোক লুকিয়ে ছিল বলে মনে হচ্ছে। সেই বার্তার পর থেকেই তাঁর ফোন স্বিচড-অফ। আর তাঁকে আর কোথাও দেখা যায়নি।

পরিবার ও বন্ধুরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতেই তদন্ত শুরু হয়। স্টেফানির বাড়ির প্রতিবেশীরাও জানান, সেই রাতেই তাঁরা উচ্চস্বরে তর্ক-বিতর্কের আওয়াজ শুনেছিলেন। কেউ কেউ দাবি করেন, সেখানে নাকি দেখা গিয়েছিল স্টেফানির প্রাক্তন প্রেমিককেও। সন্দেহের তীর সোজা তাঁর দিকেই ঘোরে।

এরই মাঝে, অস্ট্রিয়া-স্লোভেনিয়া সীমান্তের কাছে একটি ক্যাসিনোর বাইরে একটি গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করে ওই যুবককে। পরে জেরার মুখে তিনি ভেঙে পড়ে জানান—শ্বাসরোধ করেই তিনি স্টেফানিকে খুন করেছেন। তারপর দেহটি একটি স্যুটকেসে ভরে স্লোভেনিয়ার গভীর জঙ্গলে পুঁতে রেখে আসেন। তাঁর নির্দেশে পুলিশ সেই জায়গায় গিয়ে দেহ উদ্ধার করে।

কিন্তু কে ছিলেন স্টেফানি? কীসের জন্য এত খ্যাতি?

গ্রাৎজ় শহরের বাসিন্দা স্টেফানি পেশায় ছিলেন নেটপ্রভাবী—লাইফস্টাইল, সৌন্দর্যচর্চা, ফ্যাশন, ভ্রমণ—সব কিছু মিলিয়ে তাঁর অনলাইন উপস্থিতি ছিল অস্ট্রিয়ার অন্যতম জনপ্রিয়। এ ছাড়া আইন নিয়ে পড়াশোনা, পাশাপাশি সঙ্গীতে ধীরে ধীরে কেরিয়ার গড়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর। বহু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডও তাঁকে অ্যাম্বাসাডর হিসেবে ব্যবহার করত। তাঁর ছবিগুলি সমাজমাধ্যমে নিয়মিত ভাইরাল হত।

এত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, এত জনপ্রিয়তা—সব কিছুরই নিষ্ঠুর পরিসমাপ্তি ঘটল এক ভয়ংকর ব্যক্তিগত সম্পর্কে।

অস্ট্রিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক ছাড়াও তাঁর ভাই এবং সৎবাবাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। স্টেফানির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই মৃত্যুর আসল সময়, খুনের ধরন—সব স্পষ্ট হবে।

এই নৃশংস ঘটনার পরে অস্ট্রিয়া জুড়ে প্রশ্ন উঠছে—সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত মানুষেরা কি আরও বেশি ঝুঁকিতে? জনপ্রিয়তা কি কখনও-সখনও ভয়ঙ্কর ঈর্ষা বা আবেগের শিকার হয়? স্টেফানির মর্মান্তিক মৃত্যু সেই প্রশ্নগুলোর সামনে নতুন করে আলো ফেলেছে।

এক সপ্তাহের নিখোঁজ রহস্য শেষে প্রিয় নেটপ্রভাবীর মৃত্যু সংবাদে স্তম্ভিত তাঁর ভক্তকূল। তাঁর শেষ হোয়াট্‌সঅ্যাপ বার্তা এখন যেন আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে—সেই সতর্কতা হয়তো ছিল মৃত্যু-বার্তা, যা কেউ বুঝতে পারেনি।

Read more

Local News