🔥 বঙ্গোপসাগরে অগ্নিপরীক্ষায় ব্রহ্মস: সিঁদুর অভিযানের পর আরও শক্তিশালী রূপে ভারতীয় সেনার দূরপাল্লার অস্ত্র

বঙ্গোপসাগরে অগ্নিপরীক্ষায় ব্রহ্মস!

সিঁদুর অভিযানের সময় শত্রু ঘাঁটিতে অব্যর্থ নিশানা কষে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়েছিল ভারতীয় সেনার সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মস। সেই শক্তির প্রদর্শনের পর আরও উন্নত ক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে সোমবার বঙ্গোপসাগরে ফের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করল ভারতীয় সেনা। এই পরীক্ষায় ক্ষেপণাস্ত্রটি তার সব নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা সূত্র।

ভারতীয় সেনার দক্ষিণ কমান্ডের ব্রহ্মস ইউনিট এবং আন্দামান-নিকোবরের ট্রাই-সার্ভিস কমান্ড যৌথভাবে এই পরীক্ষাটি পরিচালনা করে। এটি ছিল পরিকল্পিত ‘প্রেসিশন ট্রায়াল’, যেখানে ব্রহ্মসের পাল্লা, গতিবেগ, দিকনির্দেশনা এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সহ নানা প্রযুক্তিগত বিষয় বিশদভাবে পরীক্ষা করা হয়। যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, যাতে বোঝা যায় যে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থাতেও ব্রহ্মস কতটা নিখুঁত ভাবে কাজ করতে সক্ষম।

সূত্র অনুযায়ী, এই পরীক্ষায় ব্রহ্মস তার স্থিরতা বজায় রেখে দ্রুত গতিতে টার্গেটের দিকে ছুটে গিয়েছে এবং অত্যন্ত নির্দিষ্ট ভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। সেনার মতে, এই সাফল্য প্রমাণ করে ব্রহ্মস ইউনিটগুলির রিয়েল-টাইম প্রস্তুতি এবং যুদ্ধক্ষেত্রে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে সেনার দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিঁদুর অভিযানের পর ব্রহ্মস নিয়ে আলোচনা চরমে পৌঁছেছিল। শত্রুদেশ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পর্যন্ত তাঁর এক ভাষণে ব্রহ্মসের উল্লেখ করেছিলেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও পাকিস্তানকে সতর্ক করেছিলেন যে সিঁদুর অভিযান ছিল কেবলমাত্র ‘ঝলক’, পাকিস্তানের প্রতিটি কোণ এখন ব্রহ্মসের নাগালের মধ্যে। শুধু তাই নয়—দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের আগ্রাসন ঠেকাতে ফিলিপিন্স তাদের নৌসেনায় ভারতীয় ব্রহ্মস মোতায়েন করে আন্তর্জাতিক স্তরেও তার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।

ব্রহ্মস বর্তমানে চার ধরনের প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য—স্থলভূমি, যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন এবং বিমান। স্থলভিত্তিক সংস্করণের সাধারণ পাল্লা ২৯০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার। তবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারত ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ও গতিবেগ দুই-ই বাড়ানোর পাঁচ দফা পরিকল্পনা নিয়েছে। উন্নত সংস্করণে ব্রহ্মসের পাল্লা ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুপারসনিক (ম্যাক ২.৮–৩) থেকে হাইপাসনিক পর্যায়ে উন্নীত করা হচ্ছে, যা শব্দের গতির পাঁচ গুণ বা তারও বেশি।

সেনা মহলে মনে করা হচ্ছে, এই পরীক্ষা শুধু রুটিন যাচাই নয়—বরং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা কতটা শক্তিশালী হতে পারে তারই গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। বঙ্গোপসাগরে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ তাই কৌশলগত দিক থেকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি রাশিয়া-সহযোগিতাপ্রাপ্ত ব্রহ্মস আজ দেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য আক্রমণাত্মক অস্ত্র। সুপারসনিক গতিবেগ, কম উচ্চতায় উড়ে শত্রুর রাডারে ধরা না পড়া এবং নির্ভুল লক্ষ্যভেদ ক্ষমতার কারণে ব্রহ্মস ভারতীয় সেনার প্রধান আস্থাভাজন অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। সোমবারের সফল পরীক্ষা আবারও প্রমাণ করল—ভারতের ব্রহ্মস আগের তুলনায় আরও তীক্ষ্ণ, আরও দ্রুত এবং আরও ভয়ঙ্কর।