রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারা, পাকিস্তান অচল করার হুঁশিয়ারি পিটিআইয়ের!
জেলবন্দি পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর পরিবারের দেখা করতে দেওয়ার দাবি ক্রমশ তীব্র আকার নিচ্ছে। সেই দাবিতে মঙ্গলবার ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে ব্যাপক বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তার আগেই রাওয়ালপিন্ডিতে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। গুরুত্বপূর্ণ শহরজুড়ে কড়া নিরাপত্তা, পাঁচ জনের বেশি জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা— সব মিলিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে।
রাওয়ালপিন্ডির পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বুধবার পর্যন্ত কোনও ধরনের সভা, মিছিল বা গণজমায়েত করা যাবে না। শুধু আগ্নেয়াস্ত্রই নয়, বল বিয়ারিং কিংবা ক্ষতিকর এমন কোনও বস্তু বহন করলেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উদ্বিগ্ন নিরাপত্তা বাহিনী আরও জানিয়েছে, গোষ্ঠী সংঘর্ষ কিংবা হিংসাত্মক ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্ররোচনামূলক ভাষণ, লাউডস্পিকারের ব্যবহার— সবকিছুর ওপরই বিধিনিষেধ জারি করেছে প্রশাসন।
পিটিআইয়ের দাবি, ইসলামাবাদ হাই কোর্ট মার্চ মাসে নির্দেশ দিয়েছিল— পরিবারের সদস্যরা অন্তত সপ্তাহে দু’দিন জেলে গিয়ে ইমরানের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। অথচ সেই নির্দেশ পালন করা হয়নি। আদালতের নীরবতায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে পিটিআই নেতৃত্বের। তাই একদিকে হাই কোর্টের সামনে বিক্ষোভ, অন্যদিকে আদিয়ালা জেল পর্যন্ত মিছিল করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফ্রিদি রাওয়ালপিন্ডির বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে পারেন বলেও জানা গেছে।
২০২৩ সালের অগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দি রয়েছেন ইমরান খান। আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি সাজা হয়েছে তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিরও। কিছু দিন ধরে পরিবারকে তাঁকে দেখতে না দেওয়ায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত। তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে। যদিও জেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে— ইমরান পুরোপুরি সুস্থ এবং জেল বদলের খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এদিকে ইমরানের বোন আলিমা খান আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, জানান হয়েছে অবমাননার অভিযোগও করেছেন তিনি। পিটিআইয়ের বক্তব্য, ইমরানকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দিচ্ছে প্রশাসন। পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতারা অভিযোগ করেছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির রাখতে সরকারের নির্দেশেই ইমরানকে মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরেও ইমরান অভিযোগ করেছিলেন, পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের নির্দেশে জেলের ভিতরে তাঁর এবং বুশরার উপরে মানসিক নির্যাতন চলছে।
সব মিলিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা তীব্র হচ্ছে। রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে রাওয়ালপিন্ডি— সর্বত্র নিরাপত্তার তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঘিরে সাধারণ মানুষ, প্রশাসন, এমনকি বিদেশি কূটনীতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়ছে। ইমরানের সঙ্গে পরিবারের সাক্ষাৎ পুনর্বহাল হবে কি না, আদৌ বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকবে কি না— এখন সেদিকেই তাকিয়ে বিশ্লেষকরা।

