এসআইআর প্রক্রিয়ায় নতুন নির্দেশনায় কী কী করণীয়?
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে সক্রিয় হল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। নির্বাচন কমিশন সময়সীমা সাত দিন বাড়ানো মাত্রই জেলা প্রশাসনের উদ্দেশে পাঠানো হল বিস্তারিত নির্দেশপত্র—এই অতিরিক্ত সময়ে কোন কোন কাজ করতেই হবে এবং কী ভাবে করতে হবে, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
🔸 সময়সীমা বাড়ল কেন ও কতটা?
এনুমারেশন ফর্ম আপলোডের শেষ তারিখ ছিল ৪ ডিসেম্বর। বহু জায়গা থেকে আপলোডে দেরির অভিযোগ আসায় কমিশন সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ১১ ডিসেম্বর করেছে। অর্থাৎ, বিএলও (বুথ লেভেল অফিসার) এবং ইআরও (ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার)–রা পেয়েছেন অতিরিক্ত সাত দিন সময়।
রাজ্যের সিইও–র স্পষ্ট নির্দেশ—এই বাড়তি সময়কে ব্যবহার করতেই হবে শতভাগ নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির জন্য।
🔸 ২ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে হবে কোন কাজ?
সিইও–র চিঠি অনুযায়ী—
- বিএলও–দের কাছে জমা থাকা সব এনুমারেশন ফর্ম ২ ডিসেম্বরের মধ্যেই আপলোড করতে হবে।
- ২ ডিসেম্বরের পরে নতুন করে যে ফর্মগুলি আসবে, সেগুলি সেদিনই আপলোড করতে হবে।
- এরপরও যদি ১১ ডিসেম্বরের পরে কারও কাছ থেকে ফর্ম পাওয়া যায়, অ্যাপে সেটি ‘আনকালেক্টেবল’ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে—এটি আর গ্রহণযোগ্য হবে না।
🔸 অতিরিক্ত সাত দিনে কী কী করতে হবে?
এবার শুরু হচ্ছে আসল কাজ। সিইও দফতর জানিয়েছে—
১️⃣ বিএলও অ্যাপে করা প্রতিটি এন্ট্রি আবার মিলিয়ে দেখতে হবে ফর্মের হার্ড কপির সঙ্গে।
ভুল পাওয়া গেলে তা অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২️⃣ কোনও সংস্থা বা অন্য কোনও ব্যক্তি দ্বারা পূরণ করা ফর্ম বিশেষ ভাবে যাচাই করতে হবে, যাতে ভুল তথ্য প্রবেশ না করে।
৩️⃣ পুনরায় যাচাইয়ের জন্য কিছু বিশেষ ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে:
- পরিবারপ্রধান দাবি করা ব্যক্তির বয়স ২০০২ সালে ৬০ বছর বা বেশি ছিল কি না, তা যাচাই।
- ২০০২ সালে বাবা বা মায়ের নামই শুধু তালিকায় ছিল, কিন্তু ভোটারের বয়স এখন ৫০ পার—তাহলে প্রশ্ন করতে হবে কেন সে সময় তাঁর নাম ছিল না।
- বাবা-মেয়ের বয়সফারাক ১৮ বছরের কম বা ৪৫ বছরের বেশি হলে বাড়িতে গিয়ে তথ্য যাচাই।
- অনুপস্থিত সদস্যের হয়ে অন্য কেউ সই করলে ভোটারের পরিচয় ফোনে বা সরেজমিনে যাচাই।
৪️⃣ বিএলও–দের ভুল এন্ট্রি সংশোধনে উৎসাহ দেওয়া হবে ইআরও/এএইচআরও–দের পক্ষ থেকে।
🔸 কোন কোন বুথে বিশেষ নজর দিতে হবে?
সিইও দফতর জানিয়েছে—
- ২০২১ ও ২০২৪–এর নির্বাচনে স্পর্শকাতর বুথ হিসেবে চিহ্নিত জায়গাগুলিতে তথ্য যাচাই হবে কঠোরভাবে।
- যেখানে বাবা-মা-সন্তানের ম্যাপিং ৫০ শতাংশের বেশি, সেগুলিও পুনরায় খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
- মৃত ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করে তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে হবে। রেশন কার্ড বাতিলের তথ্যও বিবেচনায় রাখা হবে।
- যে বুথে ‘আনকালেক্টেবল’ ফর্ম ০–২০টির মধ্যে, সেখানে এন্ট্রি ঠিক হয়েছে কি না, তা খুঁটিয়ে দেখতে হবে।
🔸 সাপ্তাহিক বৈঠক ও পর্যবেক্ষণ
এই কাজের অগ্রগতি পরীক্ষা করতে চলতি সপ্তাহেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবে সিইও দফতর।
🔶 সারকথা
সময়সীমা বাড়ানো মানেই কাজ ঢিলেঢালা হবে না। বরং নির্বাচন কমিশন চায়—আরও নিখুঁত, আরও নির্ভুল, আরও আধুনিক ভোটার তালিকা। এর জন্যই অতিরিক্ত সাত দিনের নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এখন দেখার, জেলা প্রশাসন কী ভাবে এই কাজ বাস্তবে রূপ দেয়।

