🔵 কেকেআরেই নতুন ভূমিকা! আইপিএলকে বিদায় জানিয়ে রাসেলের আবেগঘন ঘোষণা

কেকেআরেই নতুন ভূমিকা!

১১ বছরের সোনালি অধ্যায় পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত আইপিএল ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন আন্দ্রে রাসেল। কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে যাঁকে দেখে অভ্যস্ত কোটি ক্রিকেটপ্রেমী, তিনি আর কোনওদিন আইপিএলে খেলতে নামবেন না—রবিবার নিজের ভিডিয়ো বার্তায় এই সিদ্ধান্ত জানান ‘দ্রেরাস’। তবে স্বস্তির খবর, খেলা না হলেও কলকাতা তাঁর ঠিকানা বদলাচ্ছে না। নতুন দায়িত্বে কেকেআর পরিবারের সঙ্গেই থাকছেন এই ক্যারিবিয়ান তারকা।

২০১২ সালে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে আইপিএল অভিষেক। দুই মরসুম পরে ২০১৪-য় কেকেআরের হাতে তুলে নেওয়া হয় তাঁকে। সেই থেকেই রাসেল হয়ে ওঠেন কলকাতার হৃদস্পন্দন। তাঁর ব্যাটিংয়ের তাণ্ডব, বল হাতে বিধ্বংসী স্পেল—এ সবই কেকেআর সমর্থকদের স্মৃতিতে অমলিন। কিন্তু গত দু’মরসুমে ছন্দপতন। চোট-ফর্ম মিলিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন দলনেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা। নিলামের আগে কঠিন সিদ্ধান্ত—রাসেলকে রিটেন না করেই দল সাজাল কেকেআর। তাঁর পরেই আসে রাসেলের নিজের সিদ্ধান্ত—আইপিএলকে বিদায়।

এতদিন যাঁর নীল-বেগুনি জার্সি ছাড়া আইপিএল অধরা মনে হত, তিনি জানিয়ে দিলেন—খেলায় বিদায় নিলেও কলকাতার প্রতি তাঁর আবেগ অটুট। তাই কেকেআরের বিরুদ্ধে অন্য দলের হয়ে মাঠে নামার চিন্তাই তাঁর পক্ষে অসম্ভব। সেই কারণেই অবসর। তবে এখানেই শেষ নয় তাঁর আইপিএল যাত্রা। ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে দেওয়া হয়েছে নতুন পরিচয়—‘পাওয়ার কোচ’। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং—সব বিভাগেই শক্তির ব্যবহার, ম্যাচে মানসিক প্রস্তুতি—এসব বিষয়ে তরুণ ক্রিকেটারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবেন রাসেল। বেঙ্কি মাইসোর নিজে তাঁর হাতে এই দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন।

রাসেলের স্পষ্ট বক্তব্য—
“এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কয়েক রাত ঘুমোতে পারিনি। আমার ক্যারিয়ারের ১১ বছর কেটেছে কেকেআরের হয়ে। কিন্তু এমন সময় আসে, যখন বুঝতে হয়, সরে দাঁড়ানোই ভালো। আমি চাইনি কেউ যেন বলে—‘আরও আগেই অবসর নেওয়া উচিত ছিল।’ তাই সময় থাকতে থাকতেই বিদায় বললাম।”

তিনি আরও জানান, বিশ্বের অন্যান্য লিগে খেলা চালিয়ে যাবেন। তবে আইপিএলের মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি দেখা যাবে আর একটি ভূমিকায়—ফ্র্যাঞ্চাইজির পরিবারের সদস্য হিসেবে। শাহরুখ খান ও বেঙ্কির সঙ্গে কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে রাসেল বলেন,
“ওঁরা আমাকে যে সম্মান ও ভালোবাসা দিয়েছেন, তা ভোলার নয়। নতুন ভূমিকা নিয়ে আমিও উৎসাহী। কলকাতাকে আমি শুধু দল নয়—পরিবার মনে করি।”

অবসর ঘোষণার পর রাসেল স্মরণ করলেন তাঁর আইপিএলের ‘স্বর্ণসময়’—
● কেকেআরের হয়ে ২১১৭ রান
● ১০৩টি উইকেট
● ২০১৪ ও ২০২৪—দুই আইপিএলজয়ী দলের অন্যতম স্তম্ভ
● একমাত্র বিদেশি ক্রিকেটার, যার ২০০০+ রান ও ১০০+ উইকেট—এই রেকর্ডে তাঁর সঙ্গে আছেন কেবল রবীন্দ্র জাডেজা।

শেষে কলকাতার সমর্থকদের উদ্দেশে রাসেলের বার্তা—
“আমি আবার ফিরছি, তবে এ বার ক্রিকেটার নয়, অন্য পরিচয়ে। আপনারা সবসময় আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, প্রতিটি ছক্কা আপনাদের জন্যই ছিল। এ বার আপনাদের দলের উন্নতিতে মাঠের বাইরে থেকে সাহায্য করব।”

এভাবে এক যুগব্যাপী যোদ্ধা অধ্যায়ের ইতি টেনে রাসেল শুরু করলেন নতুন দিগন্ত—কেকেআরের পরামর্শদাতা ও পাওয়ার কোচ হিসেবে। কলকাতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যে আরও দৃঢ় হল, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।