🔥 তিনশো টাকার সাহস থেকে তিনশো কোটির সাম্রাজ্য: চিনু কালার অবিশ্বাস্য পথচলার গল্প

তিনশো টাকার সাহস থেকে তিনশো কোটির সাম্রাজ্য!

মাত্র ১৫ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়া এক কিশোরীর হাতে ছিল পরনের জামা, পায়ের জুতো আর মাত্র ৩০০ টাকা। বাকিটা ছিল অদম্য জেদ আর বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা। সেই কিশোরীই আজ ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্যাশন জুয়েলারি ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা— চিনু কালা। প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা আজ তাঁর হাতের মুঠোয়।

শুরুটা অন্ধকারেই—লড়াইয়ের মধ্যেই বেড়ে ওঠা

১৯৮১ সালে রাজস্থানের সাধারণ পরিবারে জন্ম চিনুর। এক বছর বয়সেই মা তাঁকে ছেড়ে সৌদিতে চলে যান। বাবার ও সৎমায়ের সঙ্গে বড় হওয়া মেয়েটির জীবনে শান্তির জায়গা খুব কমই ছিল। ঘরোয়া অশান্তি, অবহেলা আর মানসিক চাপ তাঁকে কৈশোরেই বুঝিয়ে দেয়—নিজেকেই নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হবে।

১৫ বছর পূর্ণ হতেই চিনু সিদ্ধান্ত নেন—এই ঘর তাঁর নয়। সামান্য কিছু কাপড় আর তিনশো টাকা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন মুম্বইয়ে।

রাত কাটল প্ল্যাটফর্মে—তার পরের পথ আরও কঠিন

মুম্বই পৌঁছে পরিচিত কেউ ছিলেন না। আশ্রয় বলতে প্ল্যাটফর্ম। পরপর দু’ রাত স্টেশনের বেঞ্চেই কাটাতে হয় তাঁকে। ভয়, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা—তবুও হাল ছাড়েননি। ভাগ্য ফেরাতে হাতে ছিল কেবল মনোবল।

দু’দিনের মাথায় স্টেশনে বসে থাকা চিনুকে দেখে এক মহিলা সাহায্যের হাত বাড়ান। কমিশনের ভিত্তিতে ছুরি, কোস্টার ইত্যাদি বাড়ি বাড়ি বিক্রি করার কাজ পান চিনু। কোনও দিন আয় হতো ২০ টাকা, কোনও দিন ৬০। রাতে ২০ টাকায় একটি ডর্মিটরিতে থাকতে পারতেন।

প্রথম দিকে প্রায় সব বাড়ি থেকেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হতো। লজ্জা, অপমান, ভয়—সব মিলিয়ে অসহনীয় সময়। তবু পিছিয়ে যাননি। এক বছরের মধ্যেই এত দক্ষ হন যে সংস্থাই তাঁকে সুপারভাইজার পদে উন্নীত করে।

এক কাজ নয়—বেঁচে থাকার জন্য শত কাজ

রেস্তরাঁয় ওয়েট্রেস, পোশাকের দোকানে সেলস গার্ল, টেলিকলার, রিসেপশনিস্ট—জীবিকা চালাতে অসংখ্য কাজ করতে হয়েছে চিনুকে। কখনও সারা দিন বিক্রি করার পর আবার রাত ১১টা পর্যন্ত খাবার পরিবেশন করে টাকা রোজগার করেছেন। মাঝে মডেলিং করেও আয় করেছেন কিছু।

২০০০ সালে টাটা কমিউনিকেশনসে চাকরি পান। সেখানেই পরিচয় হয় অমিত কালার সঙ্গে। ২০০৪ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। অমিতই তাঁর স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সাহস জোগান।

মডেলিং থেকে ব্যবসায়—স্বপ্ন পেল নতুন দিশা

২০০৮ সালে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে টপ ১০–এ পৌঁছোন চিনু। পরে মিসেস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার ফাইনালেও পৌঁছন, যদিও ইংরেজিতে উত্তর দিতে না পারার কারণে জিততে পারেননি। কিন্তু এখান থেকেই আসে আত্মবিশ্বাস।

মডেলিংয়ের অভিজ্ঞতা তাঁকে ফ্যাশন জুয়েলারির দিকে টেনে আনে। প্রথমে নিজের কর্পোরেট গিফটিং কোম্পানি খোলেন—যা সোনি, এয়ারটেল, ইএসপিএনের জন্য কাজ করে জনপ্রিয়তা পায়।

মাত্র তিন লক্ষ টাকায় ব্যবসা শুরু, আজ কোটি কোটি টাকার ব্র্যান্ড

২০১৪ সালে বেঙ্গালুরুর ফিনিক্স মলে মাত্র ৩৬ বর্গফুট জায়গায় শুরু হয় তাঁর জুয়েলারি ব্র্যান্ড। প্রথম দিনেই হয় দেড় লক্ষ টাকার বিক্রি। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

কোভিডের সময়ে অনলাইনে বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
২০২৪ সালে তাঁর সংস্থার বার্ষিক আয়ই ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
আজ গ্রাহকসংখ্যা ৪০ লক্ষ, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, কোচিতে রয়েছে আউটলেট।
শার্ক ট্যাঙ্কে ১.৫ কোটি টাকার বিনিয়োগও পেয়েছেন তিনি।

এ পর্যন্ত কোম্পানির মোট বিক্রি ৩১০ কোটি ছাড়িয়েছে।