Monday, December 1, 2025

জিনের বিন্যাস বদলিয়ে রক্তচাপ নামাতে পারে কমলার রস! গবেষণায় মিলল চমকপ্রদ ফল

Share

জিনের বিন্যাস বদলিয়ে রক্তচাপ নামাতে পারে কমলার রস!

শীতের আবহে বাজার ভরে ওঠে তাজা কমলালেবুতে। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এই ফল যে ভিটামিনে ভরপুর, তা সকলেই জানেন। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাল আরও অভাবনীয় তথ্য—কমলালেবুর রস শুধু শরীর সতেজ রাখে না, বরং উচ্চ রক্তচাপ ও প্রদাহজনিত রোগ কমিয়ে শরীরের কিছু জিনের বিন্যাস পর্যন্ত বদলে দিতে পারে! ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রাজ়িলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা যৌথভাবে এই বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করেছেন।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘মলিকিউলার নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড রিসার্চ’ জার্নালে। সেখানে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন, কমলালেবুর রসে থাকা সিট্রাস ফ্ল্যাভোনয়েড নামক উপাদান শরীরে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি দু’ভাবেই কাজ করে। এই যৌগ দেহের প্রদাহ কমায়, রক্তনালিকে প্রসারিত করে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং রক্তচাপকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক মাত্রায় নামিয়ে আনে।

গবেষণার পদ্ধতি বেশ আকর্ষণীয়। নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা কিছু অংশগ্রহণকারীকে দুই মাস ধরে প্রতিদিন দু’কাপ কমলালেবুর রস খাওয়ানো হয়। নির্ধারিত সময় শেষে তাঁদের শারীরিক ও জিনগত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—শরীরের প্রায় ১৭০০টি জিনে পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহের মাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করে। উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রেও মিলেছে আশাব্যঞ্জক ফল—যাঁদের চাপ স্বাভাবিকের ঊর্ধ্বে ছিল, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই তা নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, কমলার রসের এই উপকারী প্রভাব স্থূলতা প্রতিরোধেও কার্যকর হতে পারে। শরীরের বিপাকক্রিয়া উন্নত হয় এবং কোষের অক্সিডেটিভ ক্ষতি কমে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

কমলালেবুর উপকারিতা নিয়ে এর আগেও গবেষণা হয়েছে। ২০১৯ সালে ‘জার্নাল অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ইন্ট্রামেডিয়ারি মেটাবলিজ়ম’-এ প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছিল, কমলালেবুতে থাকে উচ্চমাত্রার ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও কোলিন। এগুলি হৃদ্‌যন্ত্রকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে পটাশিয়াম রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে অত্যন্ত সহায়ক।

এ ছাড়া কমলালেবুর গ্লাইসেমিক সূচক মাত্র ৪৩, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়তে দেয় না। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও পরিমিত পরিমাণে কমলার রস খেতে পারেন, যদি তা ঘরেই তৈরি হয়। গবেষকেরা সতর্ক করেছেন—বাজারে পাওয়া প্যাকেটজাত কমলার রসের মধ্যে অতিরিক্ত কৃত্রিম চিনি ও সংরক্ষণকারী মেশানো থাকে। ফলে সেখানে কমলার আসল গুণ কার্যত নষ্ট হয়ে যায় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি উল্টে বাড়তে পারে।

গবেষণা বলছে, প্রতিদিন দু’কাপ করে ঘরে বানানো কমলার রস দুই মাস খেলেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, জিনগত কার্যপ্রণালিতে ইতিবাচক বদল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি—এসবই সম্ভব। কমলালেবুর রস শরীরকে যেমন ভিতর থেকে পুষ্ট করে, তেমনই দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন ক্রনিক রোগের ঝুঁকিও কমায়।

অতএব এই শীতে কমলার রস শুধু স্বাদের আনন্দই দেবে না, বরং দেবে শরীরকে গভীর থেকে সুস্থ হওয়ার এক নতুন সুযোগ। বিজ্ঞানীরা বলছেন—“এক গ্লাস কমলার রস মানেই প্রতিদিন দেহের জিনগত স্তরে এক চিমটে সুস্থতার যোগান।”

Read more

Local News