কেন মাঝসিরিজ়ে অবসর নিলেন অশ্বিন, জানালেন নিজেই
ভারতের অন্যতম সফল স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অফ স্পিন, ক্যারম বল, ফ্লাইট—দক্ষতা ও মেধার মিশেলে দু’দশক ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজত্ব করে এসেছেন তিনি। কিন্তু ২০২৫ সালের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝেই হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়া। এত বড় সিদ্ধান্ত কি কারও চাপে? কোনও দলগত সমীকরণের কারণে? নাকি শারীরিক সমস্যা? অবশেষে নীরবতা ভেঙে নিজের অবসরের প্রকৃত কারণ জানালেন অশ্বিন।
আর কারণটি শুনলে আরও বেশি অবাক হবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা— ১৩ বছর আগের এক ব্যক্তিগত প্রতিজ্ঞাই তাঁকে থামিয়েছে!
১৩ বছরের পুরনো কথায় অটল অশ্বিন
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিয়োতে অশ্বিন জানান, ২০১২ সালে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজ় হারের ঠিক পরেই তিনি নিজের মনে এক প্রতিজ্ঞা করেন—
“এর পর যে দিন আবার ভারতের মাটিতে কোনও টেস্ট সিরিজ় হারব, তার পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেব।”
তাঁর কথায়,
“সেই হারের যন্ত্রণা আমাকে বদলে দিয়েছিল। দেশে সিরিজ় জেতা ছিল আমাদের গর্ব। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম—আর এক বার এমন হলে আমি সরে দাঁড়াব।”
এর পর দীর্ঘ ১২ বছর কেটে যায়। ভারতের মাটিতে পরপর সাফল্য আসে। অশ্বিন নিজেও হয়ে ওঠেন দলের ভরসা। কিন্তু ২০২৪ সালে নিউ জিল্যান্ডের কাছে সিরিজ় হারের সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে যায় সেই ২০১২ সালের প্রতিজ্ঞা। মন ভেঙে যায় অশ্বিনের। নিজের কথা রাখা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না বলে জানান তিনি।
তাই অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝেই তিনি জানিয়ে দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত।
চাপ নয়, নিজের সিদ্ধান্ত— জানালেন অশ্বিন
অশ্বিন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তাঁকে অবসর নিতে কেউ বাধ্য করেননি। বরং অধিনায়ক রোহিত শর্মা, কোচ গৌতম গম্ভীর, নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর—সকলেই তাঁকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেছিলেন।
“রোহিত আমাকে বলেছিল আরও কিছু দিন ভেবে দেখতে। অনেকেই চেয়েছিলেন আমি খেলি। কিন্তু নিজের কথার মর্যাদা রাখতে হল।”
এমনকি আইপিএলেও আর খেলবেন না বলে জানিয়ে দেন তিনি। পরে বিগ ব্যাশ লিগে খেলার জন্য প্রস্তাব পেয়েছিলেন অশ্বিন, কিন্তু চোটের কারণে সফল হয়নি সেই পরিকল্পনাও।
অশ্বিন কি তবে ফেরার কথা ভাবছেন?
যদিও অবসরের কারণ স্পষ্ট করেছেন, কিন্তু এই মুহূর্তে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরবেন কি না, সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি তিনি। তবে তাঁর বক্তব্য,
“নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারেরা যেন নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। প্রতিজ্ঞা করুক, নিজেকে বদলাক।”
তাঁর এই মন্তব্যে ইঙ্গিত মিলছে যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না ফিরলেও ভারতীয় যুব ক্রিকেটারদের পথ দেখাতে তিনি আগ্রহী।
ভারতীয় ক্রিকেটে অশ্বিনের প্রভাব
- টেস্টে ৫০০ উইকেট
- বহু সিরিজ়ে ম্যাচ ও সিরিজ় সেরা
- ভারতের অন্যতম সফল স্পিন অলরাউন্ডার
- বিদেশি মাটিতেও প্রভাবশালী পারফর্ম্যান্স
- ব্যাট হাতেও ম্যাচ বাঁচানো ও ম্যাচ জেতানো ইনিংস
অশ্বিনের মতো ক্রিকেটমস্তিষ্ক ও কৌশলী স্পিনার ভারতীয় ক্রিকেটে দ্বিতীয় নেই বললেই চলে। তাই তাঁর অবসর ক্রিকেটপ্রেমীদের মনেও তৈরি করেছে শূন্যতা। তবে ১৩ বছরের প্রতিজ্ঞা তিনি রেখেছেন মাথা উঁচু করেই—এটাই এক দৃষ্টান্ত।
শেষ কথা
১৩ বছর আগের একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তই জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত তৈরি করেছে অশ্বিনের জন্য। কিন্তু নিজের নীতি থেকে তিনি একচুলও সরে আসেননি।
অসাধারণ ক্রিকেটার, তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কের কৌশলী বোলার—রবিচন্দ্রন অশ্বিন ভারতীয় ক্রিকেটে চিরদিন এক অনন্য নাম হয়ে থাকবেন।

