চট্টগ্রামে ব্যাটিং বিপর্যয়ে ডুবল বাংলাদেশ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গিয়েছে। আর মাত্র তিন মাস বাকি। সেই প্রস্তুতি সারতেই আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ছোট ফরম্যাটের সিরিজে নামল বাংলাদেশ। কিন্তু সিরিজের প্রথম ম্যাচই হয়ে উঠল উদ্বেগের কারণ। চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দলকে ৩৯ রানের বড় ব্যবধানে হারাল আয়ারল্যান্ড। ব্যাটিং ব্যর্থতা যেন আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল দলের পুরনো সমস্যাগুলিকেই।
টস জিতে আগে বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন লিটন। কিন্তু সিদ্ধান্ত যে খুব একটা ফল দিচ্ছে না, পাওয়ার প্লের কয়েক ওভারেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। আয়ারল্যান্ডের দুই ওপেনার পল স্টার্লিং এবং টিম টেক্টর শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে মাঠে নামেন। প্রতি ওভারে প্রায় দশ রান তুলতে থাকেন তাঁরা। বোলারদের উপর চাপে বাড়ছিল প্রতি মুহূর্তে।
অবশেষে দলকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন তানজিম হাসান সাকিব। ২১ রানের মাথায় তিনি ফেরান স্টার্লিংকে। তবে আয়ারল্যান্ডের রানের চাকা থামাতে পারেননি কেউই। টিম টেক্টরের সঙ্গে জুটি বাঁধেন হ্যারি টেক্টর। টিম ১৯ বলে ৩২ রান করে রিশাদ হোসেনের বলে ফিরলেও তখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দিয়েছেন তাঁরা। অন্য প্রান্তে হ্যারি টেক্টর নিজের ছন্দ ধরে রেখে তুলে নেন দাপুটে অর্ধশতরান। ৪৫ বলে ৬৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। শেষ দিকে কার্টিস ক্যাম্ফার ২৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললে ২০ ওভারে আয়ারল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৮১।
১৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ যে প্রথম থেকেই চাপের মুখে পড়ে, তার প্রতিফলন ঘটে ব্যাটারদের বিপর্যয়ে। প্রথম ছয় ওভারে ৪ উইকেটের পতন—এ যেন সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি ব্যর্থতার পুরনো ছবি। তানজিদ হাসান তামিম (২), পারভেজ হোসেন ইমন (১), অধিনায়ক লিটন দাস (১) এবং সাইফ হাসান (৬)—কারও ব্যাটেই রান এল না। প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণকে সামলাতে ব্যর্থ হয়ে তাঁরা দ্রুত সাজঘরে ফেরেন।
এই বিপর্যয়ের ভিড়ে দৃঢ় লড়াই চালান তৌহিদ হৃদয়। তিনি প্রায় একার হাতে বাংলাদেশের ইনিংসটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। জাকের আলি ২০ রান করে কিছুটা সঙ্গ দেন বটে, কিন্তু তাতে বড় ক্ষতি পূরণ হওয়ার ছিল না। ৫০ বলে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন হৃদয়, যেখানে ছিল সাতটি চার ও তিনটি ছয়। দেখে মনে হচ্ছিল তিনি যেন আলাদা কোনও পিচে ব্যাট করছেন। সঙ্গ পেলেই ম্যাচের চিত্র অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু বাংলাদেশি ব্যাটারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় সেই সম্ভাবনাও হাতছাড়া হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। হারতে হয় ৩৯ রানের বড় ব্যবধানে। আয়ারল্যান্ডের তরুণ বোলার ম্যাথু হামফ্রিস নেন ৪ উইকেট, ব্যারি ম্যাকার্থির ঝুলিতে যায় ৩ উইকেট।
বিশ্বকাপের আগে এই ব্যাটিং বিপর্যয় চিন্তায় ফেলবে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে। বিশেষ করে ঘরের মাঠে এমন লজ্জাজনক ব্যর্থতা আরও বড় প্রশ্ন তুলে দেয়—ছোট ফরম্যাটে দলের ব্যাটিং অস্থিরতা কবে কাটবে? হৃদয়ের দুর্দান্ত ইনিংসও তাই দলের বিপর্যয়ে পরিণত হল নিছক সান্ত্বনা পুরস্কার।

