‘দিটওয়া’–র দাপট!
বঙ্গোপসাগরের বুকে যেন ঘূর্ণিঝড়ের থাবা থামছেই না! ‘সেনিয়া’-র রেশ কাটতে না কাটতেই দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম। বৃহস্পতিবার গভীর নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘দিটওয়া’। নামকরণ করেছে ইয়েমেন। মৌসম ভবন ও আলিপুর আবহাওয়া দফতর দু’পক্ষই জানাচ্ছে—এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের উপকূলের দিকে দাপটের সঙ্গে এগোচ্ছে।
যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরাসরি ঝুঁকির মুখে নয়, কিন্তু তার প্রভাবে রাজ্যের আবহওয়ায় বড় পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে তাপমাত্রা, আগামী কয়েক দিনও থাকবে ঊর্ধ্বমুখী পারদ।
🔸 কোথায় ‘দিটওয়া’? কী বলছে আবহাওয়া দফতর?
মৌসম ভবন জানিয়েছে, নতুন ঘূর্ণিঝড়টি শ্রীলঙ্কার বাট্টিক্যালোয়া শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করছে। পাশাপাশি—
- পুদুচেরী থেকে দূরত্ব: ৪৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে
- চেন্নাই থেকে দূরত্ব: ৫৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে
- গত ছ’ঘণ্টায় গতি: প্রতি ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর–উত্তর-পশ্চিম দিকে আরও অগ্রসর হবে। ৩০ নভেম্বর, রবিবার উত্তর তামিলনাড়ু, পুদুচেরী ও দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলের কাছে ল্যান্ডফল হতে পারে।
🔸 কোন কোন রাজ্যে ঝড়–বৃষ্টি?
ঘূর্ণিঝড় দিটওয়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে দক্ষিণ ভারতজুড়ে—
তামিলনাড়ু
- ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি
- কোথাও কোথাও ২০ সেমি–র বেশি বর্ষণের আশঙ্কা
- বেশ কিছু এলাকায় লাল সতর্কতা
- মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্ট্যালিন রাজ্যজুড়ে NDRF-কে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন
পুদুচেরী ও অন্ধ্রপ্রদেশ
- জারি সতর্কতা
- সমুদ্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ
- মৎস্যজীবীদের বাড়তি সতর্কবার্তা
🔸 বাংলায় সরাসরি প্রভাব নেই, কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ছে কেন?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে—
- পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই
- রাজ্যের প্রায় সর্বত্র থাকবে শুষ্ক আবহাওয়া
- উত্তর ও দক্ষিণ—দুই বঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ২–৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়তে পারে
- পরবর্তী চার দিন তাপমাত্রায় বিশেষ হেরফের হবে না
কলকাতায় বৃহস্পতিবার রাতের তাপমাত্রা ছিল ১৭.৩°C, শুক্রবারও পারদ সেই জায়গাতেই। যদিও কয়েক দিন আগে তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রিতে নেমে শীতের আমেজ দিয়েছিল, এখন আবার সেই শীতের ছোঁয়া কিছুটা কমছে।
দিনের বেলায় কলকাতার আকাশ থাকবে মূলত পরিষ্কার। বৃহস্পতিবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭.৫°C, যা স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য কম।
🔸 কেন বারবার ঘূর্ণিঝড়?
বঙ্গোপসাগরের জলতাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকার কারণে শীত–শুরুর মাসগুলোতে ঘন ঘন নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হচ্ছে।
সেনিয়ার পরে দিটওয়া তারই সাম্প্রতিক নজির।
🔸 শেষ কথা
যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরাসরি ঘূর্ণিঝড়–ঝুঁকির মধ্যে নেই, তবু দিটওয়া তার উষ্ণ প্রভাব ফেলছে বাংলার আবহাওয়ায়। দক্ষিণে তাপমাত্রা বাড়ছে, শুষ্কতার মাত্রাও থাকছে আগের মতোই। অন্য দিকে দক্ষিণ ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে প্রবল ঝড়–বৃষ্টির জন্য।
সমুদ্রে না যাওয়ার সতর্কবার্তা জারি হয়েছে উপকূলজুড়ে। রবিবার ‘দিটওয়া’ স্থলভাগে আছড়ে পড়লে পরিস্থিতি কেমন হবে, এখন সেদিকেই নজর দেশের আবহবিদদের।

