ভিড়ভাট্টা নয়, নিস্তব্ধতা চাই?
শীতের সকাল, নরম রোদ, ঝাউবনের ফাঁক গলে আসা হাওয়ার সঙ্গে যদি যোগ হয় প্রকৃতির নিস্তব্ধতা— তার তুলনা হয় না। কিন্তু দিঘা, পুরী বা মন্দারমণির মতো জনপ্রিয় সৈকতে গেলে সেই শান্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শীতের মরসুমে পর্যটকের চাপ এতই বেশি থাকে যে সমুদ্রের রূপের থেকেও চোখে পড়ে ভিড়ের ঢেউ। তাই যারা ভিড় এড়িয়ে, আরও অকৃত্রিম ও শান্ত পরিবেশে সমুদ্রকে উপভোগ করতে চান, তাঁদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার তিনটি লুকোনো সৈকতের ঠিকানা এখানে তুলে ধরা হল।
১) কানাই চট্ট— ঝাউবন, নীরবতা আর লাল কাঁকড়ার রাজ্য (পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ)
দিঘা কিংবা মন্দারমণি থেকে খুব দূরে নয় এই কানাই চট্ট। কিন্তু ভিড়ের নামগন্ধ নেই। এখানে পৌঁছোনোর প্রথম মুহূর্তেই চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ জঙ্গল, ম্যানগ্রোভ, পুকুরের ধার আর নির্জন পথ। সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই দেখা মিলবে লাল কাঁকড়ার দল— পায়ের শব্দ পেলেই ঝট করে সেঁধিয়ে যায় গর্তে।
এখানে থাকার জায়গা বলতে একটি মাত্র বিচ ক্যাম্প। শৌখিনতার অভাব আছে ঠিকই, তবে প্রাকৃতিক পরিবেশের কাছে গিয়ে থাকার আনন্দ অন্য কোথাও পাওয়া কঠিন। নিজের মনে বসে মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি খেতে খেতে সমুদ্রের হাওয়ায় দিন কাটানোই এখানে বড় আকর্ষণ।
কী করবেন?
• অলস সময় কাটানো
• চাইলে অটোতে চেপে যেতে পারেন দরিয়াপুর লাইটহাউস
• পেটুয়াঘাট থেকে ভেসেলে নদী পেরিয়ে হিজলি শরিফ দেখার সুযোগ
• রসুলপুর নদীতে নৌ-বিহার
কী ভাবে যাবেন?
• ট্রেনে এলে কাঁথি স্টেশন, সেখান থেকে অটো ধরে কানাই চট্ট।
• বাসে এলে কাঁথির রূপশ্রী বাইপাস → কাঁথি → পেটুয়াঘাট → কানাই চট্ট।
• কলকাতা থেকে গাড়িতে পৌঁছনো সবচেয়ে সহজ।
২) মার্কণ্ডী সৈকত— নদী আর সমুদ্র মিলনের মনোরম মোহনা (ওড়িশা)
ওড়িশার গঞ্জাম জেলার ছোট্ট মৎস্যজীবী গ্রাম মার্কণ্ডী লুকিয়ে রেখেছে এক অন্য রকম সমুদ্রতট। এখানে সমুদ্রের আগে চোখে পড়বে নদী— স্থানীয়রা একে বলেন মার্কণ্ডী নদী। নদী পেরিয়ে তারপর বালুতট, যেখানে আছড়ে পড়ে ঢেউ। জায়গাটির সৌন্দর্য অনেকেরই মনে করিয়ে দেয় তালসারিকে, তবে মার্কণ্ডীর শান্ত মেদুরতা আলাদা।
সৈকতের বালিতে সবুজের ছোঁয়া, দূরে শিবমন্দির, আর কেয়া বন— পুরো জায়গাটাই যেন ছবির মতো। বসে থাকলে দেখা মিলবে লাল কাঁকড়ার আসা–যাওয়া।
কী করা যায়?
• মোহনায় বসে থাকা
• শিবমন্দির ঘোরা
• মার্কণ্ডী গ্রাম পরিদর্শন
• কেয়া বনের ভিতর দিয়ে হাঁটা
কী ভাবে যাবেন?
• হাওড়া থেকে ট্রেনে ব্রহ্মপুর → গাড়িতে মার্কণ্ডী।
• সড়কপথে কলকাতা থেকেও যাওয়া যায়।
৩) পরিখী— নদী, সাগর আর ঝাউবনের মিলিত রূপ (বালেশ্বর, ওড়িশা)
বুড়িবালাম নদীর কাছেই অবস্থিত নিভৃত পরিখী সৈকত। এখানে পৌঁছেই চোখে পড়বে সারি সারি ঝাউগাছ, হাওয়ায় দুলছে ডালপালা। সকালের নরম রোদে বালুতটে হাঁটতে হাঁটতে বিভিন্ন রঙের ঝিনুক আর ভেসে আসা শঙ্খ মন ভাল করে দেয়।
জায়গাটি মূলত প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য। অতিরিক্ত আকর্ষণ না থাকলেও নদীর ধারে সারি সারি পানসি দেখে খেয়া চেপে ভেসে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনন্য।
কী করা যায়?
• সমুদ্রে একান্তে সময় কাটানো
• বুড়িবালাম নদীর খেয়া ভ্রমণ
• আশপাশের গ্রাম দেখা
কী ভাবে যাবেন?
• হাওড়া ও সাঁতরাগাছি থেকে বালেশ্বরগামী ট্রেন
• বাসেও বালেশ্বর যাওয়া যায় (৬–৭ ঘণ্টা)
• বালেশ্বর থেকে ১৮ কিমি দূরে পরিখী
• কলকাতা থেকে গাড়িতে দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিমি
শেষ কথা
যদি চান— সমুদ্রের ধারে ভিড়ের ঝকমারিতে নয়, বরং নিস্তব্ধতা, প্রকৃতি আর প্রশান্তির সঙ্গে সময় কাটাতে— তবে দিঘা–পুরীর বাইরে এই তিনটি লুকোনো সৈকত আপনাকে ফের প্রেমে ফেলবে সমুদ্রের।
এই শীতেই ছুটি কাটাতে গন্তব্য বেছে নিন নতুন করে।

