২৬ লক্ষ ভোটারের নাম মিলছে না ম্যাপিং-এ!
রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া জোরকদমে চলছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় এখনই উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে এক বিস্ময়কর তথ্য— এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৬ লক্ষ ভোটারের নাম ম্যাপিং-এ মেলেনি। বুধবার দুপুর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে আসা রিপোর্টে উঠে এসেছে এই পরিসংখ্যান। ডিজিটাইজ়েশন পুরোপুরি শেষ হলে সংখ্যাটি আরও বাড়বে বলেই ধারণা কমিশনের।
■ কী ভাবে উঠে এল ২৬ লক্ষ নাম মিলছে না–এই তথ্য?
কমিশন জানাচ্ছে,
- রাজ্যের বর্তমান ভোটার তালিকার সঙ্গে
- ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে সম্পন্ন হওয়া শেষ এসআইআর তালিকা
এই দুই তালিকার তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, যাঁরা অন্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, তাঁদের নামও সেই পুরনো এসআইআর তালিকায় খোঁজ করা হচ্ছে। এই মিলানোর প্রক্রিয়াতেই উঠে এসেছে ২৬ লক্ষ নাম মিলছে না।
এতেই শেষ নয়। এখন পর্যন্ত ডিজিটাইজ়েশন হয়েছে ৬ কোটির বেশি এনুমারেশন ফর্মের। সব ফর্ম ডিজিটাইজ়ড হলে ম্যাপিং-এর তথ্য আরও বাড়তে পারে।
■ ‘ম্যাপিং’ বলতে কী বোঝায়?
ম্যাপিং বলতে বোঝায়—
- এ বছরের ভোটার তালিকায় থাকা কোনও ব্যক্তির নাম
- শেষ এসআইআর তালিকায় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা
এ ছাড়াও দেখা হয় সংশ্লিষ্ট ভোটারের মা-বাবা বা পরিবারের নাম আগের তালিকায় ছিল কি না। এভাবে মিল পেলে সংশ্লিষ্ট ভোটারের পরিচয় নিশ্চয়তা পাওয়া যায় এবং তাঁকে অতিরিক্ত নথি দিতে হয় না।
■ নাম না-মেলা মানেই কি বাদ?
কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে—
- নাম না-মেলা মানেই নাম বাদ নয়।
- যাঁদের নাম বা পরিবারের তথ্য দুই তালিকায় মেলে, তাঁদের কোনও নথি লাগবে না।
- যাঁদের নাম মেলেনি বা যাঁদের তথ্য অস্পষ্ট—
তাঁদের ক্ষেত্রে নথি যাচাই হবে।
অর্থাৎ, ম্যাপিং কেবল একটি স্ক্রিনিং পদ্ধতি, নাম বাদ দেওয়ার সরাসরি মানদণ্ড নয়।
■ কত ফর্ম বিলি ও ডিজিটাইজ়ড হলো?
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী—
- মোট ভোটার: প্রায় ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার
- ফর্ম বিলি হয়েছে: ৭ কোটি ৬৪ লক্ষ ৬৮ হাজার (৯৯.৮%)
- ডিজিটাইজ়ড ফর্ম: ৬ কোটি ১ লক্ষের বেশি (প্রায় ৭৮%)
ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন ৪ ডিসেম্বর। ৪ নভেম্বর থেকে ফর্ম বিলির কাজ শুরু হয়েছিল।
■ কেন অন্য রাজ্যের তালিকা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে?
কমিশন বলছে—
২০০২–২০০৬ সালে যাঁদের নাম অন্য রাজ্যের এসআইআরে ছিল, তাঁদের অনেকেই পরে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। তাঁদের নামও নাগরিক হিসাবে বৈধ। তাই—
- বিহার
- ঝাড়খণ্ড
- ওড়িশা
- উত্তর প্রদেশ—সহ বহু রাজ্যের আগের এসআইআর তথ্য
এসবের সঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
কমিশনের এক সূত্র বলছে—
পশ্চিমবঙ্গে ম্যাপিং-এ নাম না-মেলার হার বিহারের ফলের কাছাকাছি থাকবে।
অর্থাৎ, নাম না-মেলা মানেই অনুপ্রবেশের প্রমাণ নয়, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর বা পূর্ব তথ্যের ঘাটতি থাকতে পারে।
■ বাড়ছে চাপ ও বিতর্ক
এসআইআর পর্বে বিজেপি বার বার ‘অনুপ্রবেশ তত্ত্ব’ তুললেও, কমিশন বলছে—
- তথ্য মিলছে না বলেই নাম বাদ পড়বে, এমন সিদ্ধান্ত এখনই নেই
- শেষপর্যন্ত বিএলও তদন্ত ও নথি যাচাই–এর উপরেই নির্ভর করবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
তবে ডিজিটাইজ়েশন যত এগোবে, ম্যাপিংয়ের সংখ্যা বাড়বে। ফলে আগামী সপ্তাহে আরও নতুন তথ্য সামনে আসতে পারে।

