বিধানসভায় সাধারণ বিধায়কের আসনেই বসতে হবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে
শীতকালীন অধিবেশন ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অন্দরে জল্পনার ঝড়। তিন বছরেরও বেশি কারাবাস শেষে জেলমুক্তি পাওয়ার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়-এর বিধানসভা ভবনে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। তিনি কি আগের মতোই আলাদা কক্ষ বা বিশেষ সুবিধা পাবেন? সেই প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়—এ বার আর নয়।
বুধবার সংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে স্পিকার স্পষ্ট জানান, “পার্থবাবু আর মন্ত্রী নন। তাই বিধানসভায় তাঁর কোনও আলাদা কক্ষ বরাদ্দ হবে না। তিনি এখন একজন সাধারণ বিধায়ক—সেই নিয়মেই বসতে হবে।”
❖ কেন এই সিদ্ধান্ত?
২০২২ সালের ২৩ জুলাই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে—
- তাঁকে তৃণমূলের মহাসচিব পদ থেকে সরানো হয়
- ছয় বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়
- শিল্পমন্ত্রীর পদ থেকেও অপসারণ করা হয়
দীর্ঘ ৩ বছর ৩ মাস ১৯ দিন কারাবাসের পর তিনি সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন। তবে মুক্তির পরে যে প্রশ্ন উঠছিল—বিধানসভায় ফিরে তিনি কি আবার আগের মতো সম্মান পাবেন? স্পিকারের বক্তব্যে সে জল্পনার ইতি।
❖ সাধারণ বিধায়কের মতোই আচরণ
স্পিকার জানিয়েছেন—
- বিধানসভায় পার্থের জন্য আলাদা রুম থাকবে না
- তাঁকে নির্দিষ্ট সাধারণ আসনেই বসতে হবে
- অন্যান্য বিধায়কদের মতোই সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তার বেশি নয়
অর্থাৎ মন্ত্রিত্ব বা দলের পদ হারানোর পর বিধানসভায় তাঁর অবস্থান এখন শুধু একজন নির্বাচিত সদস্যের।
❖ এখনও পর্যন্ত নেই আনুষ্ঠানিক নথিপত্র
স্পিকার আরও জানান, বিধানসভা সচিবালয়কে এখনও পর্যন্ত—
- পার্থের জেলমুক্তির আনুষ্ঠানিক তথ্য দেওয়া হয়নি
- তিনি অধিবেশনে যোগ দেবেন কি না, সেটিও এখনও নিশ্চিত নয়
তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তিনি যোগ দিলে শীতকালীন অধিবেশনের তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
❖ জেল থেকে বেরিয়ে কী করলেন পার্থ?
মুক্তি পাওয়ার পরেই পার্থ চিঠি দিয়েছেন—
- তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে
- জানতে চেয়েছেন, দলের কোন ধারায় তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে
- এছাড়া নিজ কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমের ভোটারদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠিও প্রকাশ করেছেন
কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি বাড়ির বাইরে বেরোননি। দলের ‘জনতার দরবার’ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও যাননি।
❖ সামনে কী ঘটতে পারে?
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিধানসভায় ফেরা ঘিরে প্রশ্নগুলি—
- তিনি কি শীতকালীন অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন?
- থাকলে তাঁর বক্তব্য কি দলের ভিতর নতুন বিতর্ক তৈরি করবে?
- তৃণমূল কি ভবিষ্যতে তাঁকে দলীয়ভাবে পুনর্বাসনের ভাবনায় আছে?
স্পিকারের মন্তব্যে স্পষ্ট—পার্থকে আর বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হবে না। বিধানসভা তাঁর জন্য পূর্বের সম্মান নয়, নিয়মমাফিক আচরণই নিশ্চিত করবে।
সব মিলিয়ে, পার্থের বিধানসভা ভবনে ফেরার সম্ভাবনা ঘিরে রাজ্য রাজনীতি আরও একবার উত্তপ্ত হতে চলেছে।

