অর্ধেক কর্মী নিয়ে দফতরে কাজ, রাস্তায় বিক্ষোভ—দূষণ সংকটে অশান্ত রাজধানী
দিল্লির শীত মানেই দূষণে ঢেকে যাওয়া আকাশ। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নভেম্বরের শেষ দিকেই রাজধানীর বাতাস এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে যে কোথাও কোথাও এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ছুঁয়ে ফেলেছে ৪০০। পরিস্থিতি ‘গুরুতর’ থেকে ‘অতিগুরুতর’-এর দিকে এগোতেই প্রশাসন আরও কড়া নির্দেশ জারি করেছে।
রাজধানীর সব সরকারি ও বেসরকারি দফতরকে বলা হয়েছে—এখন থেকে মাত্র ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ চালাতে হবে। বাকিদের ওয়ার্ক ফ্রম হোমই বাধ্যতামূলক।
❖ কোন পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত?
দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি গত কয়েক সপ্তাহে দ্রুত অবনতি হয়েছে। অদৃশ্য বিষাক্ত কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে শহর, সকাল-বিকেলেই দেখা যাচ্ছে ধোঁয়া–ধোঁয়া আবহ। অনেক এলাকায় AQI ৪০০ ছুঁয়ে গিয়ে ‘গুরুতর’ মাত্রায় পৌঁছে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতেই কেন্দ্রীয় সংস্থা সিএকিউএম (Commission for Air Quality Management) জারি করেছে GRAP-3 (Graded Response Action Plan) প্রয়োগের নির্দেশ।
কিন্তু দিল্লি সরকার জানিয়ে দিয়েছে—
GRAP-3 নয়, নাগরিকদের মানতে হবে GRAP-4-এর নিয়ম, অর্থাৎ একধাপ কঠোর বিধিনিষেধ।
❖ GRAP অনুযায়ী কী কী নিয়ম?
AQI অনুযায়ী চার ধাপে ভাগ GRAP:
- GRAP-1: AQI ২০১–৩০০
- GRAP-2: AQI ৩০১–৪০০
- GRAP-3: AQI ৪০১–৪৫০
- GRAP-4: AQI ৪৫১-এর ঊর্ধ্বে
যদিও এখন GRAP-3 চালু, প্রশাসন GRAP-4-এর আরও কঠোর নির্দেশ মানতে বলেছে—
- সরকারি-বেসরকারি দফতরে কর্মী সংখ্যা ৫০%
- নির্মাণ কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা
- দূষণ বাড়ায় এমন যানবাহনে নিয়ন্ত্রণ
- এমারজেন্সি ছাড়া ট্রাক প্রবেশ নিষিদ্ধ
- স্কুল–কলেজে খেলাধুলা বা আউটডোর কার্যক্রম বন্ধ
❖ স্কুল-ক্লাবগুলোতেও কড়া সতর্কবার্তা
দিল্লি সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে—
- নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে কোনও ক্রীড়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না
- শিশুদের খোলা মাঠে খেলতে দেওয়া নিষেধ
- প্রয়োজনে ক্লাস সম্পূর্ণ অনলাইন করতে হবে
❖ রাস্তায় প্রতিবাদ, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি
দূষণের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দিল্লিবাসী।
রবিবার সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া গেট চত্বরে শতাধিক মানুষ অবস্থান-বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিক্ষোভ উত্তপ্ত হয়ে উঠতেই—
- পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি
- কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে পেপার স্প্রে ছোড়ে
- রাস্তায় চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়
সোমবার দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে—
২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে,
যাদের মধ্যে ১৭ জনকে আদালত তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
❖ সমস্যার মূলে কী?
দিল্লির দূষণের অন্যতম কারণ—
- পার্শ্ববর্তী রাজ্যে ফসলের খড় পোড়ানো
- গাড়ির ধোঁয়া
- কারখানার নির্গমন
- নির্মাণকাজের ধুলো
- শীতকালে ঠান্ডা আবহ ও বায়ু স্তর নিচে নেমে আসা
এই সব মিলিয়েই রাজধানীর বাতাস প্রতিদিন আরও বিষাক্ত হয়ে উঠছে।
❖ ভবিষ্যৎ কী?
বায়ুদূষণে দিল্লির জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত।
কাজকর্ম প্রায় অর্ধেক কমে যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে, রাস্তায় জনরোষ বাড়ছে।
প্রশাসনের দাবি—
অস্থায়ী কড়াকড়ি না করে উপায় নেই।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তি অসম্ভব।

