চেনা গণ্ডির বাইরে শীতের ভ্রমণ
শীতকাল মানেই ভ্রমণের মরসুম। কিন্তু দিঘা, মন্দারমণি, ঝাড়গ্রাম বা পুরুলিয়ার মতো জায়গা বহুবার ঘোরা হয়ে গেলে মন খোঁজে নতুন ঠিকানা। আসলে বাংলার আনাচকানাচে এমন অসংখ্য স্থান লুকিয়ে আছে, যেগুলো খুব একটা প্রচার পায় না, অথচ সৌন্দর্যে ভরপুর। এই শীতে এমনই পাঁচটি স্বল্পপরিচিত গন্তব্য আপনাকে এনে দিতে পারে অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
১. গোপালপুর — অরণ্য, নদী, ইতিহাসের অনন্য মিলন
ওড়িশার সমুদ্রসৈকত নয়, এ বাংলার পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপালপুর। শাল, শিমুল, পিয়ালের সবুজ বনে ঘেরা এই অঞ্চল এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠছে।
গোপালপুর বায়োডাইভারসিটি পার্কে প্রবেশমূল্য দিয়ে ঢুকলে চোখে পড়বে পুষ্পবাগান, পুষ্করিণী আর শালবনের ছায়া। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন—
- কংসাবতীর জোড়া ব্রিজ
- জমিদার বাঁধ, যেখানে গ্রাম্য পরিবেশের মাঝেই নদীর ধারে বিশ্রাম নেওয়া যায়
- লালগড়ের জঙ্গল
- দুই প্রাচীন শিবমন্দির— ভুবনেশ্বর ও গগনেশ্বর, যেগুলির টেরাকোটার কাজ আজও যথেষ্ট অটুট
কীভাবে যাবেন?
ট্রেনে মেদিনীপুর নেমে টোটো বা গাড়িতে পৌঁছে যেতে পারেন। কলকাতা থেকে সড়কপথে কোলোঘাট–ডেবরা হয়ে সহজেই গোপালপুর যাওয়া যায়।
২. দুবরাজপুর — মামা-ভাগ্নে পাহাড় আর প্রাচীন মন্দিরের দেশ
বীরভূমের এই শহর পর্যটকদের তালিকায় খুব বেশি জায়গা পায় না, অথচ এখানে রয়েছে অনন্য ভ্রমণ-রসদ। সবচেয়ে বিখ্যাত—
- মামা-ভাগ্নে পাহাড়, যেখানে দুটি রহস্যময় পাথর ব্যালান্স করে আছে অবিশ্বাস্য ভাবে
- রঘু ডাকাতের টেরাকোটার মন্দির
- ১৩ চূড়া শিবমন্দির
- নীল নির্জন— বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধার, যেখানে নীল আকাশের প্রতিবিম্বে জলের রং বদলে যায়
- হেতমপুরের রঞ্জন প্যালেস, যাকে বলা হয় ক্ষুদ্র ‘হাজারদুয়ারি’
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে সরাসরি দুবরাজপুর পর্যন্ত ট্রেন আছে। সিউড়ি হয়ে বাসেও পৌঁছনো যায়।
৩. গুড়গুড়িপাল — শালের বনের বুকেই নির্জন দুপুর
প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে স্বর্গ হতে পারে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই ছোট্ট গ্রামটি। শাল, সেগুন, আকাশমণির ঘেরা অরণ্যের পাশে বয়ে চলেছে কাঁসাই নদী। রয়েছে ছোট্ট ইকো পার্ক, আবার চাইলে একেবারে নির্জনতায়ও সময় কাটানো সম্ভব।
এখানে দেখা মেলে—
- জঙ্গল আউলেট
- জার্ডন’স নাইটজ়ার
- ইন্ডিয়ান পিট্টা
প্রকৃতি-নিবিষ্ট দিন কাটাতে গুড়গুড়িপাল দারুণ উপযুক্ত।
কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে কোলোঘাট–ডেবরা হয়ে মেদিনীপুর, সেখান থেকে ধেড়ুয়া রোড ধরে গোপগর পেরোলেই গুড়গুড়িপালের জঙ্গল।
৪. বংকুলুঙ — পাহাড়ি গ্রাম, অথচ কামড়ানো ঠান্ডা নেই
শিলিগুড়ি থেকে মিরিক যাওয়ার পথে পড়বে ছবির মতো সুন্দর বংকুলুঙ। বালাসন ও মুরমা নদী এখানে মিশেছে সবুজ পাহাড়ের কোলে। গ্রাম জুড়ে রয়েছে দারচিনির ক্ষেত, রঙিন ফুলের বাগান। বড় ঠান্ডা পড়ে না বলে শীতকালই এখানে ভ্রমণের সেরা সময়।
ঘুরে নিতে পারেন—
- বংকুলুঙ গ্রামসংলগ্ন নদীপথ
- গ্যামন ব্রিজ— পাহাড় আর নদীর মনোমুগ্ধকর মেলবন্ধন
কীভাবে যাবেন?
শিলিগুড়ি থেকে ৪৮ কিমি এবং মিরিক থেকে ১৬ কিমি দূরে।
৫. বুড়িখোলা — ডুয়ার্সের মনখোলা শান্তি
জয়ন্তী–বক্সা–জলদাপাড়া ছাড়াও ডুয়ার্সে রয়েছে আরও বহু অজানা রত্ন। তার মধ্যে অন্যতম বুড়িখোলা। ডামডিম–গরুবাথান রাস্তা ধরে একটু অন্দরমহলে ঢুকলেই দেখা মিলবে বুড়ি নদীর ওপারে শান্ত গ্রামটির।
এখান থেকে যেতে পারেন—
- শাকাম জঙ্গল
- চাপড়ামারি
- জলদাপাড়া
- অথবা চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন পাপড়ক্ষেতি, মইরুনগাঁও, লাভা
কীভাবে যাবেন?
গরুবাথানের আগেই ডান দিকের রাস্তা ধরে পাহাড়ি–জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পৌঁছে যেতে হয় বুড়িখোলায়।
শেষ কথা
চেনা ভিড়ভাট্টার বাইরে একটু নিরিবিলি, একটু প্রকৃতির কাছে সময় কাটাতে চাইলে এই পাঁচটি জায়গা আপনার শীতের ছুটিকে বদলে দিতে পারে। দূরে নয়— বাংলার দুর্গম প্রান্তেই লুকিয়ে আছে এ সব মনভোলানো গন্তব্য। ব্যাগ গুছিয়ে নিন, শীতের ভ্রমণ শুরু হোক নতুন স্বাদে!

