সোনালি নাকি কালো?
বাঙালির রান্নাঘরে কিশমিশ মানেই— পোলাও, পায়েস, সুজি কিংবা নানা মিষ্টি পদ। শুধু রান্না নয়, এখন তো খালি পেটে কিশমিশ ভেজানো জল খাওয়ার চলও দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু বাজারে কিশমিশ দু’রকম— সোনালি এবং কালো। দুটোই দেখতে চমৎকার, স্বাদেও দারুণ। তবে স্বাস্থ্যরক্ষা কিংবা লিভারের সুস্থতার ক্ষেত্রে কোন কিশমিশ আপনার জন্য উপকারী আর কোনটি ক্ষতিকারক— তা না জেনে নিয়মিত খাওয়া কিন্তু বিপজ্জনক হতে পারে।
মুম্বইয়ের পুষ্টিবিদ শ্বেতা জে পঞ্চাল সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে ভিডিও পোস্ট করে এই দুই ধরনের কিশমিশের গুণ-দোষ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, প্রতিদিন কিশমিশ খান? তবে আপনার জন্য কোনটি নিরাপদ, তা জানা জরুরি।
সোনালি কিশমিশ— ঝকঝকে সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে ক্ষতি
দেখতে মোটা, উজ্জ্বল এবং সুন্দর বলে অনেকেই সোনালি কিশমিশ নিতে পছন্দ করেন। কিন্তু এখানে রয়েছে বড় ফাঁদ।
সোনালি কিশমিশের রং প্রাকৃতিক নয়। এই কিশমিশকে সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী করতে ব্যবহার করা হয় সালফার ডাই-অক্সাইড, যা শরীরের পক্ষে একেবারেই নিরাপদ নয়।
সোনালি কিশমিশের ক্ষতি:
- সালফার ডাই-অক্সাইড হজমে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- অ্যাজ়মা, অ্যালার্জি বা পেটের রোগে ভোগেন এমন মানুষের জন্য এটি বিশেষ ভাবে বিপজ্জনক।
- নিয়মিত খেলে পেটফাঁপা, গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে।
- অন্ত্রের স্বাস্থ্যে ব্যাঘাত ঘটায়।
- দীর্ঘদিন খেলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে।
- হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে— বিশেষ করে নারীদের শরীরে এর প্রভাব বেশি নজরে আসে।
তবে উপকারও রয়েছে— পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরে শক্তিবৃদ্ধি করে। কিন্তু উপকারের থেকেও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ক্ষতির মাত্রা বেশি।
কালো কিশমিশ— প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পুষ্টির উৎস
কালো কিশমিশকে বলা যায় প্রকৃতির সবচেয়ে খাঁটি কিশমিশ। এগুলি রাসায়নিক ছাড়াই রোদে প্রাকৃতিকভাবে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। তাই এতে কৃত্রিম রং, প্রিজ়ারভেটিভ বা সালফারের ব্যবহার নেই।
কালো কিশমিশের উপকারিতা:
- রক্তাল্পতা দূর করে:
এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন— যা হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং দুর্বলতা কমায়। - অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ:
এতে থাকা পলিফেনল শরীরের প্রদাহ কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। - হজমশক্তি বাড়ায়:
কালো কিশমিশে থাকে প্রি-বায়োটিক ফাইবার, যা অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টেরিয়াকে বাড়তে সাহায্য করে। ফলে হজমক্ষমতা উন্নত হয়। - নারীদের জন্য বিশেষ উপকারী:
পিসিওএস, প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম বা হরমোনের ওঠাপড়া সামলাতে সাহায্য করে।
ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
তাহলে কোনটি খাবেন?
পুষ্টিবিদদের স্পষ্ট পরামর্শ—
সোনালি কিশমিশ নিয়মিত খাবেন না।
রাসায়নিক-ভর্তি সোনালি কিশমিশ মাঝে মাঝে খেলে সমস্যা নেই, তবে প্রতিদিন নয়।
যাঁদের—
- লিভার দুর্বল,
- অ্যাজ়মা বা অ্যালার্জি আছে,
- হজমের সমস্যা হয়,
- হরমোনের অসামঞ্জস্য রয়েছে,
তাঁদের সোনালি কিশমিশ এড়িয়ে চলা উচিত।
অন্যদিকে
কালো কিশমিশ নিয়মিত খেতে পারেন, কারণ এটি প্রকৃতিগতভাবে নিরাপদ এবং উপকারী।
শেষ কথা— লিভারের ক্ষতি হওয়ার আগেই সাবধান হোন
দু’ধরনের কিশমিশ দেখতে একই রকম হলেও প্রভাব আকাশপাতাল। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ যতই কিশমিশ পছন্দ করুন, ভুল কিশমিশ বেছে নিলে লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
তাই এখন থেকে কিশমিশ কিনতে গেলে চোখ রাখুন রঙে—
উজ্জ্বল সোনালির চকচকে সৌন্দর্যের চেয়ে প্রাকৃতিক কালোর প্রতি আস্থা রাখুন।
স্বাস্থ্যই আসল, স্বাদ পরে!

