আরবে ‘নিখোঁজ’ অবসরপ্রাপ্ত সেনা বিক্রান্ত! শেষ ফোনকলের আতঙ্ক আজও তাড়া করে সেলিনাকে
অভিনেত্রী সেলিনা জেটলির জীবনে এখন শুধু অপেক্ষা আর অজানা আশঙ্কার অন্ধকার। ৪৪৩ দিন ধরে তাঁর ভাই, অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক বিক্রান্তকুমার জেটলি আরবের কোথায়, কী অবস্থায় আছেন— সে খবর নেই কারও কাছে। অভিযোগ, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে তাঁকে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু সঠিক ঠিকানা, সঠিক কারণ— কোনওটাই স্পষ্ট নয়।
রবিবার এক আবেগঘন পোস্টে ভাইয়ের ছবির পাশে সেলিনা লিখলেন—
“১ বছর ২ মাস ১৭ দিন… মোট ৪৪৩ দিন। এখনও ভাইয়ের সন্ধান নেই!”
শেষ ফোনকল— কাঁপা গলায় আতঙ্কে ভরা কথাগুলো আজও কাঁদায় সেলিনাকে
সেলিনা জানিয়েছেন, খুব কষ্টে, লুকিয়ে বিক্রান্ত তাঁকে শেষবার ফোন করেছিলেন। সেই ফোনকলেই তিনি বুঝেছিলেন— ভাই প্রবল বিপদের মুখে।
সেলিনার কথায়,
“ভাইয়ের গলায় ভয়, যন্ত্রণা আর অসহায়তার রেশ ছিল। আমি শুনেই শিউরে উঠেছিলাম।”
এর পর থেকে আর কোনও যোগাযোগ নেই। বিক্রান্ত কোথায়, কারা তাঁকে আটকে রেখেছে— সেটাও প্রকাশ করা হচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
এক সেনার দেহে অসংখ্য আঘাত, তার পরেও নীরব দেশের সিস্টেম?
অবসর নেওয়ার আগে বিক্রান্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বহু বছর দেশের সেবা করেছেন। তাঁর শরীরে রয়েছে যুদ্ধের, ডিউটির অসংখ্য দাগ— অসংখ্য আঘাতের স্মৃতি।
এই অবস্থায় বিদেশে আটক থাকার ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় সেলিনা। তিনি জানিয়েছেন—
“দেশের জন্য জীবন বাজি রাখা এক সৈনিককে এমন দুর্দশায় দেখতে হচ্ছে, এটা ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্যও বড় প্রশ্নচিহ্ন।”
দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সেলিনা
এর আগে সেলিনা দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন করে সাহায্য চান। তাঁর আরজি—
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যেন অবিলম্বে বিক্রান্তকে প্রয়োজনীয় আইনি ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়।
তবে ৪৪৩ দিন কেটে গেলেও নিখোঁজ সেনা আধিকারিককে ফিরিয়ে আনার কোনও স্পষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। আরব প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি।
রোজই আতঙ্ক, রোজই আশা
পোস্টে সেলিনা লিখেছেন—
“প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত— ভাবি ভাইয়ের সঙ্গে কী হচ্ছে। কিন্তু সেই সঙ্গে আশা রাখি— ও ফিরে আসবে।”
তিনি জানিয়েছেন, বিক্রান্তের নিখোঁজ হওয়ার পর এই দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের পরিবার ভয় আর বিভ্রান্তিতে ডুবে আছে। প্রতিটি দিন যেন এক অনন্ত অপেক্ষার যন্ত্রণা।
৪৪৩ দিনের ক্যালেন্ডার— এক দিদির হৃদয়ভাঙা দিনলিপি
সেলিনা জানান,
“প্রথম দিন ভেবেছিলাম কয়েক ঘণ্টা পরে খবর পাব। দ্বিতীয় দিন ভাবলাম, হয়তো এক-দু’দিন লাগবে। শততম দিনে ভেঙে পড়েছি। এখন ৪৪৩ দিনেও খবর নেই!’’
এই কথাতেই স্পষ্ট— এক দিদির অসহায়তা আর বেদনার গভীরতা কতটা।
এক সেনার জন্য গোটা দেশের নজর এখন দিল্লির দিকে
এখন পুরো দেশেরই নজর দিল্লি হাই কোর্টের দিকে— বিক্রান্তের মুক্তির জন্য ভারত সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই দেখতে অপেক্ষা করছেন সকলেই।
সেলিনার একটাই দাবি—
“আমার ভাই যেন সুস্থ শরীরে, নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে।”
৪৪৩ দিনের যন্ত্রণা, আতঙ্ক আর প্রতীক্ষার গল্প— তবু আশা ছাড়ছেন না সেলিনা। তাঁর বিশ্বাস, একদিন নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন তাঁর ভাই— ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত জওয়ান বিক্রান্তকুমার জেটলি।

