শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইছে ঢাকা!
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ফের ভারতের কাছে লিখিত আবেদন জানাল— দেশে ফিরিয়ে দিতে হবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। শুক্রবারই ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রক বিশেষ দূতের হাতে একটি সংক্ষিপ্ত চিঠি দিয়ে পাঠিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশনে। নির্দেশ— যত দ্রুত সম্ভব সেই চিঠি পৌঁছে দিতে হবে নয়াদিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের টেবিলে। যদিও ভারত এ বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি।
হাসিনাকে ফেরানোর দাবিতে ফের ‘জরুরি বার্তা’
গত বছরের জুলাই-অগস্টে ছাত্র-জনতার দীর্ঘ আন্দোলনের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। তারপর থেকেই তিনি ভারতে সাময়িক আশ্রয়ে রয়েছেন। সেই সময়কার আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা চলে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে। সম্প্রতি সেই আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে আগেও কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছিল ঢাকা। সে বার ভারতের তরফে শুধু বার্তা প্রাপ্তির স্বীকৃতি জানানো হয়েছিল। সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত ভারত দেয়নি। এবার আবারও প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক আবেদনে চিঠি পাঠাল ইউনূস-নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রত্যর্পণ চুক্তি— কিন্তু ‘ফাঁক’ কোথায়?
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে— আর সেই চুক্তিটি হাসিনার সরকারের সময়েই কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী—
- আদালতে প্রমাণিত অপরাধে অপরাধীকে অপর দেশ ফেরত দেবে।
- কিন্তু ব্যতিক্রম রয়েছে।
চুক্তির মূল নিয়মাবলি:
- রাজনৈতিক স্বভাবের অপরাধে কোনওভাবেই প্রত্যর্পণ করা যাবে না।
- খুন বা গুমের মতো অপরাধ রাজনৈতিক অপরাধের আওতায় ধরা যাবে না— এ কথাও স্পষ্ট।
- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারা—
যদি অভিযুক্তের বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, বা সুষ্ঠু বিচারপ্রক্রিয়া সন্দেহজনক হয়, তবে প্রত্যর্পণের বাধ্যবাধকতা নেই।
এই ধারাগুলিই ভারতের সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কারণ হাসিনার সমর্থকদের দাবি— ট্রাইবুনালের রায় রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক।
ভারত কী বলেছিল ট্রাইবুনালের রায় নিয়ে?
হাসিনার ফাঁসির সাজা ঘোষণার পরে ভারত এক সরকারি বিবৃতিতে জানিয়েছিল—
- রায়ের বিষয়ে ভারত অবগত
- বাংলাদেশকে ‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী’ হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লি
- বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র বজায় রাখা ভারতের প্রধান অগ্রাধিকার
- সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসবে ভারত
এই বার্তায় হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নে কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।
ঢাকার চাপ বাড়ছে— দিল্লির অবস্থান স্পষ্ট নয়
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ ও আইন উপদেষ্টারা একাধিকবার বলেছেন—
“হাসিনাকে ফেরত দিতে ভারত সহযোগিতা করবে বলে আমরা আশা করি।”
কিন্তু ভারতের দৃষ্টিতে পরিস্থিতি জটিল।
কারণ—
- একদিকে রয়েছে দুই দেশের চুক্তি
- অন্যদিকে রয়েছে রাজনৈতিক চরিত্রযুক্ত মামলায় প্রত্যর্পণ না করার ধারা
- তার সঙ্গে যুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ
শেষকথা
বাংলাদেশ দাবি করছে— প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। ভারত এখনো নীরব।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই—
যে মামলার ভিত্তিতে ফাঁসির আদেশ, তা কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ভরা?
যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে প্রত্যর্পণের দরজা বন্ধই থাকবে।
আগামী দিনে এই চিঠির প্রতিক্রিয়া কী হয়, তা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক আবহেই নয়— দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

