শীতে বারবার কফি পান?
শীতের সকালে ধোঁয়া ওঠা গরম কফির কাপ— মনও চনমনে হয়, শরীরও পায় বাড়তি উষ্ণতা। আর কাজের চাপে, ঘুম ভাঙাতে বা ক্লান্তি কাটাতে দিনের মধ্যে বহু বার কফিতে চুমুক দেয় অনেকেই। কিন্তু এই অভ্যাসই অজান্তে বাড়িয়ে দিতে পারে ক্যাফিনের মাত্রা, যা শরীরে নীরবে তৈরি করে নানা সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে ২-৩ কাপ কফি পর্যন্ত ঠিক আছে, তার বেশি নিয়মিত পান করলে শরীর সতর্ক সংকেত দেখাতে শুরু করে। সেই লক্ষণগুলি চিনতে পারলেই বিপদ এড়ানো সহজ।
অতিরিক্ত ক্যাফিনে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়
হরিয়ানার এক হাসপাতালের পুষ্টিবিদ নিশা মণ্ডলের মতে, যখন শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যাফিন জমা হয়, তখন ঘুম, মেজাজ, হজম— সব ক্ষেত্রেই তার প্রভাব পড়ে। নিচে উল্লেখ করা হল অতিরিক্ত ক্যাফিনের প্রধান ৫টি লক্ষণ—
১) উদ্বেগ ও অস্থিরতা বাড়ে
স্বল্প পরিমাণ ক্যাফিন মন ভালো করলেও, অতিরিক্ত ক্যাফিন অ্যাডিনোসিন নামের রাসায়নিককে বাধা দেয় এবং বাড়ায় অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ।
ফল—
- অস্থিরতা
- দুশ্চিন্তা
- শরীরে অকারণ ছটফটানি
- মনোসংযোগে সমস্যা
এ অবস্থাকে অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারেন না যে এর কারণ কফি!
২) হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে যায়
অনেকেই লক্ষ্য করেন, কফি বেশি খেলেই হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়।
উচ্চ মাত্রার ক্যাফিন—
- হৃদস্পন্দন অনিয়মিত করতে পারে
- বুক ধড়ফড়ানি তৈরি করতে পারে
- কখনও কখনও মাথা ঘোরার অনুভূতি হতে পারে
অতএব এই লক্ষণ দেখলে কফি কমানোর সময় এসে গিয়েছে।
৩) ক্ষিধে কমে যাওয়া ও হজমের সমস্যা
বার বার কফি খেলে পেটে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং কফির ডাইইউরেটিক প্রভাবে শরীর থেকে জল কমতে থাকে। এতে—
- ক্ষিধে কমে যায়
- পেট ভার লাগে
- অম্বল, গ্যাস, হজমে গোলমাল শুরু হয়
জল কমে গেলে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অবস্থাও দ্রুত খারাপ হতে পারে।
৪) ঘুমের ছন্দ বিগড়ে যাওয়া
ক্যাফিন শরীরে ৬-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেগে কাজ করতে বা পড়তে গিয়ে রাতের দিকে কফি পান করলে—
- ঘুম আসতে দেরি হয়
- ঘুম ভেঙে ভেঙে আসে
- সকালে মাথা ভার, ক্লান্তি— নিয়মিত হয়
ঘুমানোর ৬ ঘণ্টা আগে শেষ বার চা-কফি খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।
৫) মাথা ব্যথা ও ক্যাফিন নির্ভরতা
চা-কফির প্রতি নির্ভরতা তৈরি হলে ঠিক সময়ে না পেলে—
- মাথা ব্যথা
- ঝিমুনি
- বিরক্তি
- ক্লান্তি
এসব সমস্যা বাড়তে পারে। এটি আসলে ক্যাফিন উইথড্রল-এর লক্ষণ।
কী ভাবে কমাবেন ক্যাফিন নির্ভরতা?
✔ ধীরে ধীরে কমান
যদি দিনে ৫-৬ কাপ কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে, প্রথমে চার দিন প্রতিদিন এক কাপ করে কমান। তারপর আরও কমান।
✔ পরিবর্তে নিন বিকল্প পানীয়
গ্রিন টি, মাচা টি, লেবু-জল বা ক্যামোমাইলের মতো ভেষজ চা খান— ক্যাফিন কম থাকবে বা থাকবে না একেবারেই।
✔ জল বেশি পান করুন
জল শরীরকে সতেজ রাখে, মাথা ব্যথা কমায় এবং কফির তৃষ্ণা কমায়।
✔ সন্ধ্যার পর কফি নয়
রাতের ঘুম বাঁচাতে সন্ধ্যার পর চা-কফি এড়িয়ে চলুন।
✔ গ্যাস-অম্বল, বুক ধড়ফড় বাড়লে সতর্ক হন
এ সব সমস্যা অতিরিক্ত কফির লক্ষণ— অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শীতের দিনে কফি অবশ্যই মন ভালো রাখে, কিন্তু মাত্রা পেরোলে বিপদও বাড়ে। তাই কফি খান, কিন্তু সচেতনভাবে— শরীর যে সংকেত দিচ্ছে, তা শুনে চলাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

