আতঙ্কে বন্ধ ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা
বাংলাদেশে ফের ভূমিকম্প। শুক্রবারের ভয়াবহ কম্পনের পর শনিবারও দু’দফা কাঁপল দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল। পর পর ভূকম্পনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা-সহ আশপাশের জেলাগুলিতে। নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
টানা কম্পনে অস্থির বাংলাদেশ: এক দিনে দু’বার ভূমিকম্প
শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের স্থানীয় সময় ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড এবং ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে পিঠোপিঠি দু’টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে—
- প্রথম কম্পনের তীব্রতা: ৩.৭ রিখটার
- দ্বিতীয় কম্পনের তীব্রতা: ৪.৩ রিখটার
- উৎসস্থল: প্রথমটি বাড্ডা, দ্বিতীয়টি নরসিংদী
শনিবার সকালেও নরসিংদীতে ৩.৩ মাত্রার কম্পন হয়েছিল। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোট তিনবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ।
এই ধারাবাহিক কম্পনেই বাড়ছে আতঙ্ক। ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিদ্ধান্ত: সব ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল
বারবার ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিনের জন্য সমস্ত ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী—
- ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে
- রবিবার বিকেল ৫টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে ভবন ছাড়তে হবে
- ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক দফতর খোলা থাকবে
- ভবনগুলির স্ট্রাকচারাল সেফটি পরীক্ষা করা হবে, প্রয়োজনে সংস্কারও শুরু হতে পারে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রবিবারের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল করেছে। তবে প্রশাসনিক কাজ চলবে আগের মতোই।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, দুই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (সিএসসি)-র নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়নি।
এই সিদ্ধান্তগুলি শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়।
টানা ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছিল বাংলাদেশে।
- তীব্রতা: ৫.৫ রিখটার (আন্তর্জাতিক সংস্থার মাপ অনুযায়ী)
- উৎপত্তিস্থল: নরসিংদী থেকে ১৪ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে
- গভীরতা: ১০ কিলোমিটার
এই কম্পনে শুধু বাংলাদেশ নয়, টের পাওয়া গিয়েছিল কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও।
শুক্রবারের কম্পনের ভয়াবহতা বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন মতে—
- মৃত্যু: অন্তত ১০ জন
- আহত: প্রায় ৬০০ জন
- নরসিংদী ও বাড্ডায় ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ায় হতাহত হয়েছেন অনেকে
শনিবারের পর পর কম্পন সেই আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বাসিন্দারা ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন, অনেকেই রাত কাটান খোলা জায়গায়।
ভূমিকম্প-পরবর্তী স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রশাসনের তৎপরতা
বাংলাদেশ প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতর পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।
জরুরি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে—
- বড় ভবনে অযথা অবস্থান না করার পরামর্শ
- বাড়িগুলির নিরাপত্তা পরীক্ষা
- প্রয়োজন হলে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা
- হাসপাতালগুলিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা
শেষ কথা
ক্রমাগত ভূমিকম্পে বাংলাদেশবাসীর উদ্বেগ বাড়ছে প্রবলভাবে। ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সুরক্ষাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে জানানো হয়েছে।

