দড়ি পেঁচানো গলা ও ক্ষতবিক্ষত দেহ!
ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার হাঁসডিহা এলাকা সোমবার সকালে জেগে উঠল এক ভয়াবহ ঘটনার খবর নিয়ে। একই পরিবারের চার সদস্যের দেহ দুটি আলাদা জায়গা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ— ঘরের ভেতর থেকে মা ও দুই শিশু, আর বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে ক্ষেতের মাঝখান থেকে বাবার দেহ। মৃত্যুর ধরন আলাদা, ঘটনাস্থলের দূরত্ব আলাদা— ফলে এই চার মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ রহস্য।
ঘরের ভিতর দড়ি পেঁচানো তিন দেহ
তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি, বাড়ির ভেতরে যে তিনটি দেহ মিলেছে—
- আরতি কুমারী (মা)
- রাহি (৪ বছর)
- বিরাজ (২ বছর)
তাঁদের গলায় দড়ি প্যাঁচানো ছিল। দরজা ভেঙে প্রবেশ করার পরই ঘরের মেঝেতে স্তব্ধ হয়ে পড়ে থাকা দেহগুলি দেখেন পুলিশ। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল, এটি হয়তো আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু কেন তিনজন একসঙ্গে? বাচ্চাদের গলায় দড়ি কীভাবে জড়াল?— এই প্রশ্নগুলোকে কেন্দ্র করে সন্দেহ আরও গভীর হচ্ছে।
ক্ষেত থেকে উদ্ধার বাবার দেহ— গায়ে আঘাতের চিহ্ন
অন্যদিকে, পরিবারের কর্তা বীরেন্দ্র মাঝি–এর দেহ পাওয়া যায় তাঁদের বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরে একটি ধানক্ষেতে।
স্থানীয়দের কেউ সকালে কাজে বেরিয়ে ক্ষেতের ধারে বীরেন্দ্রর দেহ দেখে খবর দেন পুলিশকে।
তাঁর শরীরে একাধিক আঘাতের দাগ, যা আত্মহত্যার ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
কীসের আঘাত? লাঠি? পাথর? নাকি ঘাতকের সঙ্গে ধস্তাধস্তির চিহ্ন?
পুলিশ এখন সেই সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছে।
ছয় বছরের সংসার, হঠাৎই মৃত্যু— কী ছিল পেছনের কারণ?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বীরেন্দ্র ও আরতির বিয়ে হয়েছিল ছ’ বছর আগে। দুই সন্তান নিয়ে তাঁদের সংসারও ছিল স্বাভাবিক— অন্তত বাইরে থেকে দেখে তাই মনে হতো।
কিন্তু পরিবারের কেউই জীবিত নেই বলে সম্ভাব্য পারিবারিক বিবাদ, মানসিক চাপ, বা আর্থিক সংকট— সবকিছুই এখন তদন্তকারীদের অনুমানের ওপর নির্ভর করছে।
আত্মহত্যা নাকি খুন— পুলিশের দ্বিধা
হাঁসডিহা থানার ওসি বলেন—
“মহিলা এবং দুই সন্তানের গলায় দড়ি জড়ানো ছিল। ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে মনে হলেও খুনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বীরেন্দ্র মাঝির শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়।”
ফরেন্সিক দল ও ডগ স্কোয়াড ঘটনাস্থলে এসে ঘর ও বাইরের ক্ষেত দু’জায়গাতেই নমুনা সংগ্রহ করেছে। তদন্তকারীরা খুঁজছেন—
- তিন জনকে কি রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে?
- তার পরে কি বীরেন্দ্রকে বাইরে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে?
- নাকি বীরেন্দ্র তিন জনকে হত্যা করে নিজে পালাতে গিয়ে বা অন্য কারও হাতে প্রাণ হারিয়েছেন?
সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গ্রামবাসীর আতঙ্ক— ‘এ কেমন ঘটনা!’
ঘটনা ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয়দের কথায়—
“বীরেন্দ্র-আরতির কোনও শত্রু ছিল বলে জানা নেই। হঠাৎ এমন মৃত্যু মানা যায় না।”
অনেকে মনে করছেন, পারিবারিক বিবাদের কোনও সূত্রই হয়তো এর পিছনে লুকিয়ে আছে। তবে পুলিশ এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছোয়নি।

