আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে আতঙ্কে ৬০০ মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রী!
হাজারো স্বপ্ন বুকে নিয়ে তারা এসেছিল পড়তে। কেউ নিটে সফল হয়ে, কেউ লাখ লাখ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে তৈরি করতে চেয়েছিল নিজের ডাক্তারি ভবিষ্যৎ। কিন্তু হরিয়ানার ফরিদাবাদের আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়— যে শিক্ষাকেন্দ্রটি কখনও ডাক্তার তৈরির কারখানা হিসেবে পরিচিত ছিল— আজ সেই প্রতিষ্ঠানই জড়িয়ে পড়েছে জঙ্গি মডিউল ও বিস্ফোরণ তদন্তে। আর তাতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে প্রায় ৬০০ মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা গ্রেফতার, টহল গোয়েন্দাদের
দিল্লি বিস্ফোরণ ও ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধারের সূত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে। ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠাতা জাওয়াদ সিদ্দীকী গ্রেফতার হয়েছেন। এনআইএ, দিল্লি পুলিশ, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ এবং হরিয়ানা পুলিশের তল্লাশি চলছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রতিদিনই বেরিয়ে আসছে নতুন দুর্নীতি, নতুন অভিযোগ, নতুন আতঙ্ক।
শিক্ষা চলছে ঠিকই, ক্লাস নেওয়া হচ্ছে, পরীক্ষা চলছে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের মাথায় একটাই প্রশ্ন—
“আমরা কি সত্যিই নিরাপদ?”
‘আমাদের অপরাধ কী?’— প্রশ্ন তুলছেন ছাত্রছাত্রীরা
দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্তকারীরা দাবি করছেন, ‘ডক্টর টেরর মডিউল’-এর সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন চিকিৎসক এবং সন্দেহভাজনদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ফলে আল ফালাহ্ ব্যবহৃত হয়েছে জঙ্গিদের আড়াল হিসেবে— এই অভিযোগ ছাত্রছাত্রীদের মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত করে তুলছে।
এক মেডিক্যাল ছাত্রের কণ্ঠে আতঙ্ক স্পষ্ট—
“যদি কাল কলেজ বন্ধ হয়ে যায়, আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়াবে? পাঁচ বছর ধরে প্রস্তুতি, টাকা, সময়— সব কি জলে যাবে?”
পরীক্ষা শেষ হওয়ায় তিনি বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও অনেকেই হস্টেল ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। যারা রয়ে গিয়েছেন, তাদের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়, জিজ্ঞাসাবাদের ভয়ে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অস্থিরতায়।
আতঙ্ক বাড়াচ্ছে জঙ্গি যোগের ছায়া
২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েক জন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। তদন্তকারী সংস্থারা মনে করছেন, ক্যাম্পাসটার মধ্যেই কোনও মডিউল গড়ে ওঠেছিল— যা ব্যবহৃত হয়েছে জঙ্গি কাজকর্ম ঢাকার জন্য।
ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য—
“আমরা পড়তে এসেছি। ডাক্তার হতে চাই। কিছু অপরাধীর কারণে কেন আমাদের জঙ্গি বলে ভাবা হবে?”
অভিভাবকদের উদ্বেগ চরমে
এক অভিভাবক রাজেশ শর্মা বলেন,
“সব ছাত্রকে জঙ্গি ভাবা অন্যায়। লাখ লাখ টাকা খরচ করে যারা ডাক্তারের স্বপ্ন দেখে ভর্তি হয়েছে, তাদের কী দোষ?”
অনেকে তাঁর সুরেই বলেছেন— কয়েক জনের অপরাধের দায় কেন সমস্ত ছাত্রছাত্রীর ওপর বর্তাবে?
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করছে—
“আগামী শিক্ষাবর্ষের সব ১৫০টি এমবিবিএস সিট ইতিমধ্যেই ভর্তি হয়ে গেছে।”
কিন্তু সেই কথা শিক্ষার্থীদের ভয় কমাতে পারছে না। কারণ তাদের বিশ্বাস—
সুনাম নষ্ট হলে ডিগ্রির মূল্যও নষ্ট হবে।
৬০০ মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
তদন্ত যত এগোচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ তত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর সেই শিক্ষকতা, সেই চিকিৎসাবিজ্ঞান, সেই স্বপ্ন— সবই আজ ধুঁকছে জঙ্গি সন্দেহের কালো ছায়ায়। শিক্ষার্থীরা বলছেন—
“আমরা না অপরাধী, না জঙ্গি। তবু শাস্তি ভোগ করছি আমরাই।”
ফরিদাবাদের আল ফালাহ্ এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত তদন্তকেন্দ্র— আর এর মাঝেই আতঙ্কে ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে শত শত চিকিৎসক হতে চলা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

