ফলের খোসাই সুস্বাস্থ্যের রক্ষাকবচ!
ফল খাওয়ার পর সাধারণত খোসা ফেলে দেওয়া আমাদের অভ্যাস। কেউ কেউ আবার খোসা জমিয়ে সার বানান বা ত্বকচর্চায় ব্যবহার করেন। কিন্তু জানেন কি, কিছু ক্ষেত্রে ফলের খোসাই আসলে মূল ফলের চেয়েও বেশি পুষ্টিকর? শুধু ফেলে দিলে নয়, বরং খোসা খেয়েও মিলতে পারে নানাবিধ উপকার। আজ রইল এমন চারটি জনপ্রিয় ফলের খোসার বিস্ময়কর উপকারিতার তালিকা—যেগুলি আপনার ডায়েটেই জায়গা পাওয়ার যোগ্য।
১) আপেলের খোসা: অ্যান্টি–অক্সিড্যান্টে ভরপুর স্বাস্থ্যরক্ষক
অনেকে আপেল খেতে গিয়ে খোসা ছাড়িয়ে দেন। অথচ ভাল করে ধুয়ে নিলে আপেলের খোসাই হতে পারে আপনার দৈনন্দিন সঙ্গী।
কী কী উপকার?
- প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট
আপেলের খোসায় থাকে প্রাকৃতিক অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট, যা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমায় এবং হৃদ্রোগ, ডায়াবিটিস প্রভৃতি দীর্ঘমেয়াদি অসুখের ঝুঁকি হ্রাস করে। - হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে
খোসায় থাকা ক্লোরোফিল শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগের সঙ্গে লড়াই করে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে। - ফাইবারের পাওয়ারহাউস
আপেলের খোসায় যে পরিমাণ ফাইবার রয়েছে, তা অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে ও হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত খিদে লাগার প্রবণতা কমায়।
২) কলার খোসা: পুষ্টিগুণে ভরপুর অবহেলিত রত্ন
কলার খোসাকে খাবার হিসেবে ভাবা হয় না। কিন্তু এর পুষ্টিগুণ অমূল্য।
- অসাধারণ পুষ্টির উৎস
কলার খোসায় রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম—প্রায় দৈনিক প্রয়োজনের ৪০ শতাংশ। এছাড়াও ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন ও জিঙ্কও মেলে যথেষ্ট পরিমাণে। - মেজাজ ভালো রাখে ও ঘুমের মান বাড়ায়
খোসায় থাকা ট্রিপটোফ্যান মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাঁচকলার খোসায় থাকে সেরোটোনিন—যা ঘুম উন্নত করতে সাহায্য করে। - হার্টকে রাখে সুস্থ
পলিফেনল ও ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।
৩) লেবুর খোসা: রসের চেয়েও বেশি কার্যকরী
লেবুর খোসার পুষ্টি উপাদান রসের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী।
- দাঁতের ক্ষয়রোধে কার্যকর
খোসায় থাকা অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান দাঁতের ক্ষয় কমায় ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। - অ্যান্টি–অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, লেবুর খোসায় রসের থেকেও বেশি অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট থাকে। - ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে
কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে সাইট্রাস ফলের খোসা কিছু বিশেষ ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
৪) কমলার খোসা: হজম থেকে ত্বক—সবেতেই উপকারী
কমলার খোসার উপকার গুণের শেষ নেই।
- জলের ঘাটতি দূর করে
কমলার খোসাতেই প্রায় ৭৩ গ্রাম জল থাকে, যা শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। - হজমশক্তি বাড়ায়
খোসায় থাকা প্রিবায়োটিক অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। ফলে হজম শক্তি উন্নত হয়। - মলত্যাগ সহজ করে
পেকটিন নামের দ্রবণীয় ফাইবারে ভরপুর কমলার খোসা, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে দারুণ কার্যকর।
শেষকথা
ফল যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনই তার খোসাও সমান উপকারী—কিন্তু শর্ত একটাই: ভাল করে ধুয়ে নিন। কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ না থাকলেই খোসা খাওয়া নিরাপদ। তাই আর খোসা ফেলে নয়—স্বাস্থ্যসাথী হিসেবে রাখুন এই চারটি ফলের খোসাকে। শরীরও ভালো থাকবে, আর অপচয়ও কমবে!

