Sunday, November 30, 2025

নতুন করে বিপদে অনিল অম্বানী: ১৪০০ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, চাপ বাড়াল ইডি

Share

নতুন করে বিপদে অনিল অম্বানী!

রিলায়্যান্স গ্রুপের চেয়ারম্যান অনিল অম্বানীর আর্থিক সঙ্কট যেন শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না। ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক প্রতারণা ও আর্থিক তছরুপ সংক্রান্ত একাধিক মামলায় জড়িয়ে পড়া শিল্পপতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এ বার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁর আরও ১৪০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যমানের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এর ফলে আর্থিক জটিলতা ও আইনি চাপ আরও বেড়ে গেল রিলায়্যান্স গ্রুপের এই শীর্ষ কর্তার ওপর।

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিল অম্বানীর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপ, ব্যাঙ্ক প্রতারণা ও মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত যে তদন্ত দীর্ঘদিন ধরে চলছে, তার প্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ। গত কয়েক বছরে ইডি ইতিমধ্যেই তাঁর প্রায় ৭৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। নতুন করে বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তির মূল্য ১৪০০ কোটিরও বেশি হওয়ায় মোট বাজেয়াপ্ত সম্পদের অঙ্ক দাঁড়াল প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এটি অনিল অম্বানীর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

তবে ঠিক কোন কোন সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা নিয়ে ইডির তরফে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তদন্তকারী সংস্থা শুধু জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে আর্থিক লেনদেনের অসঙ্গতি খতিয়ে দেখে কিছু স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে জমি, ভবন, বিনিয়োগ ও কিছু কোম্পানির শেয়ার—সবই রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত অনিল অম্বানীর সংস্থার তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। শীর্ষ আদালত সম্প্রতি তাঁকে ব্যাঙ্ক প্রতারণা মামলার নোটিস পাঠায়। গত ১৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি অনিল অম্বানীর কাছে জবাবদিহি চেয়েছে, কী ভাবে তাঁর সংস্থাগুলি ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া বিপুল অঙ্কের ঋণের সঠিক ব্যবহার করেনি এবং তাতে আর্থিক অনিয়মের সম্ভাবনা রয়েছে কি না। পাশাপাশি একই মামলায় তলব করা হয়েছে ইডি, সিবিআই এবং কেন্দ্রীয় সরকারকেও।

অর্থ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বাজেয়াপ্তির ফলে অনিল অম্বানীর আর্থিক প্রভাব আরও কমতে পারে। রিলায়্যান্স গ্রুপের একাংশ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ঋণখেলাপির মামলা, আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ ও বিনিয়োগকারীদের অসন্তোষে নাজেহাল। নতুন করে ইডির এই বড় পদক্ষেপ শেয়ার বাজারেও অনিলের সংস্থাগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে।

অনিল অম্বানীর আর্থিক বিপর্যয় শুরু হয় ২০১৯ সালের পরে, যখন রিলায়্যান্স কমিউনিকেশনস (আরকম) বিপুল ঋণভার সামলাতে ব্যর্থ হয় এবং দেউলিয়া প্রক্রিয়ায় ঢুকে যায়। এরপর ধাপে ধাপে তাঁর বিভিন্ন সংস্থা আর্থিক চাপে পড়তে থাকে। যদিও অনিল দাবি করেছিলেন, তাঁর কাছে আর ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেই—এমন বক্তব্য নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থার মতে, তাঁর নামে থাকা সম্পদের বিষয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকোনো হয়েছিল।

এখন ইডির নতুন পদক্ষেপে প্রশ্ন উঠছে—আগামী দিনে কি আরও সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে? অনিল অম্বানী কি ব্যক্তিগত ভাবে আদালতে মুখোমুখি হতে বাধ্য হবেন? ব্যাঙ্ক প্রতারণার অভিযোগে কি তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু হতে পারে?

সকলের নজর এখন সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়া মামলার ভবিষ্যৎ রায় এবং ইডির পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। অনিল অম্বানীর আর্থিক সাম্রাজ্য কোন পথে এগোয়, তা সময়ই বলবে।

Read more

Local News