এসআইআর বিতর্কে মমতার কড়া বার্তা!
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা ‘এসআইআর’ প্রক্রিয়া নিয়ে ফের ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার সরাসরি দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছেন— এই প্রক্রিয়া যেমন পরিকল্পনাহীন, তেমনই বিপজ্জনক। পাশাপাশি এসআইআর স্থগিতের অনুরোধও করেছেন তিনি। কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন, সম্প্রতি রাজ্যের দুই বুথ লেভেল অফিসারের (বিএলও) মৃত্যু ও অসুস্থতার ঘটনা। তাঁর দাবি, অতিরিক্ত চাপ ও অবাস্তব নির্দেশিকার কারণেই এমন দুঃখজনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
মমতার এই আপত্তি নতুন নয়। কয়েক দিন আগে শিলিগুড়ির সরকারি অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়েও তিনি এসআইআর-কে ‘অবাস্তব ও তাড়াহুড়োতে তৈরি হওয়া পরিকল্পনা’ বলে আক্রমণ করেছিলেন। সেই একই অবস্থান বজায় রেখে এ বার কমিশনের কাছে চিঠিতে লিখেছেন— প্রক্রিয়াটি যেমন বিশৃঙ্খল, তেমনই জনবিপন্ন।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেন, এসআইআর চালুর আগে নির্বাচন কমিশনের তরফে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকি প্রয়োজনীয় নথি ও নির্দেশিকা নিয়েও রয়েছে প্রচুর অস্পষ্টতা। তাঁর কথায়, “এটি একটি কাঠামোগত ভাবে ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়া, যার ফলে বিএলও-দের উপর অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হচ্ছে। তাঁদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিপন্ন হচ্ছে এই অতিরিক্ত দায়িত্বে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ধান কাটার ব্যস্ত সময় চলছে। কৃষি শ্রমিক, শিক্ষক ও বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী— যাঁরা বিএলও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন— তাঁদের উপর এই সময়ে বাড়তি চাপ দেওয়া অমানবিক। সাধারণ মানুষকেও এই হঠকারী প্রক্রিয়া মানসিকভাবে চাপে ফেলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাম্প্রতিক কিছু আত্মহত্যার ঘটনাও সেই চাপের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে অভিযোগ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার বক্তব্য অনুযায়ী, এসআইআর-এর কাজ চালাতে গিয়ে বহু ক্ষেত্রে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে নথি জমা দিতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেকেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, আর সেই চাপের বিরূপ প্রভাব পড়ছে বিএলও-দের উপরও। ফলে সামগ্রিক ভাবে এসআইআর এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে চিঠির শেষে মুখ্যমন্ত্রী আবেদন করেছেন— প্রক্রিয়াটি অবিলম্বে বন্ধ করে পুনর্বিবেচনা করা হোক। কমিশন যেন পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, স্পষ্ট নথি এবং যুক্তিযুক্ত সময়সীমা নির্ধারণের ব্যবস্থা করে। তাঁর মতে, “এসআইআর-এর বর্তমান কাঠামো সংশোধন না হলে তা রাজ্যের প্রশাসন ও নাগরিক— উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর হবে।”
এ বিষয়ে মমতার আগের মন্তব্য আরও একবার সামনে এসেছে। তিনি বলেছিলেন, “নোটবন্দির পর মানুষকে যেমন হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছিল, এসআইআর সেই একইভাবে সাধারণ মানুষকে বন্দি করছে। সরকারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ তৈরি করা হচ্ছে।”
তৃণমূলও দীর্ঘদিন ধরেই এসআইআর-এর বাস্তবসম্মততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে। দলের অভিযোগ— ভোট ঘোষণার মাত্র কয়েক মাস আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এমন বিশাল কাজ শেষ করা অসম্ভব।
এদিকে, বুধবার ডুয়ার্সের মালব্লকের নিউ গ্লেনকো চা-বাগানে বিএলও শান্তিমুনি ওঁরাও-এর আত্মহত্যার খবর আরও আলোড়ন ফেলে। অভিযোগ, এসআইআর-এর অতিরিক্ত চাপই তাঁকে আত্মঘাতী করেছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কমিশনকে তীব্র আক্রমণ করেন। যদিও বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এ সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের, প্রয়োজন মনে করলে কমিশনই সময় বাড়াবে।”
তবে যে বার্তা স্পষ্ট— এসআইআরকে ঘিরে ক্রমশই বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ, প্রশাসনিক অস্বস্তি এবং মানবিক সংকট। মমতার চিঠি সেই বিতর্ককে আরও তীব্র করল।

