কী ভাবে পুনর্জন্ম নিল নোকিয়ার ‘ফোন-সাম্রাজ্য’?
এক সময়ের ‘ফোন-সম্রাট’ নোকিয়া—যার নামেই একদা বেজে উঠত কোটি কোটি মোবাইলের রিংটোন—মুঠোফোনের ইতিহাসে সবচেয়ে নাটকীয় পতন এবং প্রত্যাবর্তনের গল্প আজ প্রযুক্তি জগতের গবেষণার বিষয়। স্মার্টফোনের বিপ্লব যখন পুরনো কিপ্যাড-যুগকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল, তখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছিল ফিনল্যান্ডের দেড়-শো বছরের পুরনো এই বহুজাতিক সংস্থা। তবে এক দশকের মধ্যেই নোকিয়া আবারও দাঁড়িয়ে গেল শতকোটি ডলারের সাম্রাজ্য গড়ে—এ যেন ছাই থেকে ফিনিক্সের পুনর্জন্ম!
স্মার্টফোন বিপ্লবের আগে মোবাইল ফোন নির্মাণে নোকিয়া ছিল একক আধিপত্যের নাম। কিন্তু ২০১০-এর পর থেকেই অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের অত্যাধুনিক দুনিয়া বাজারের চেহারাই বদলে দেয়। প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে নোকিয়া ২০১৩ সালে মোবাইল ফ্যাক্টরি বন্ধ করার কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। তখনই অনেকে ধরে নেন—‘নোকিয়ার গল্প শেষ’। কিন্তু সংস্থাটি ঠিক সেই সময়ই সিদ্ধান্ত নেয়—বাঁচতে হলে পথ বদলাতে হবে।
ব্যবসার মোড় ঘোরাতে নোকিয়া যে তিনটি সিদ্ধান্ত নেয়, সেগুলিই আজ তাদের ভাগ্য ফেরানোর মূল ‘জাদুমন্ত্র’। প্রথম জাদুকাঠি—মোবাইল নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাণ। নোকিয়া বুঝতে পারে, যত স্মার্টফোনই তৈরি হোক, তা চলবে ডেটা, কল এবং শক্তিশালী নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করে। আর সেই সুযোগেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে মোবাইল টাওয়ারের হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম তৈরির বাজারে। ভারতী এয়ারটেল, জিয়ো, ভোডাফোন-সহ বিশ্বের বহু টেলিকম অপারেটরের প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে নোকিয়া।
দ্বিতীয় চাবিকাঠি অপটিক্যাল ফাইবার কেবল। সারা বিশ্বে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে দেশ-দেশান্তরে সমুদ্রের গভীর পর্যন্ত যে অপটিক্যাল কেবল বসানো হচ্ছে, তার বিশাল অংশ জুড়েই রয়েছে নোকিয়ার সমাধান। এই খাত থেকেই বিপুল লাভ তুলছে সংস্থাটি।
তৃতীয় পথ—প্রযুক্তি লাইসেন্সিং। স্মার্টফোন তৈরি না করলেও নোকিয়া গত কয়েক বছরে ২০ হাজারেরও বেশি ফোন–সংক্রান্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, যা বিশ্বজোড়া ফোন নির্মাতারা কিনছে রয়্যালটি দিয়ে। এখান থেকেই আসছে স্থায়ী অর্থপ্রবাহ।
কিন্তু নোকিয়ার এই প্রত্যাবর্তনের আসল মোড় আসে এ বছর, যখন তারা মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট এনভিডিয়ার সঙ্গে হাত মেলায়। এআই-চালিত ৬জি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে নোকিয়া ১ বিলিয়ন ডলার লগ্নি করেছে। এনভিডিয়ার উন্নত চিপ প্রযুক্তি এবং নোকিয়ার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক অবকাঠামো মিলে বিশ্বব্যাপী নতুন যুগের টেলিকম বিপ্লবের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই ঘোষণার পরই লাফিয়ে বেড়েছে নোকিয়ার শেয়ার বাজারমূল্য।

