Sunday, November 30, 2025

হাসিনার ফাঁসির আদেশ ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’—জয়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া, বিচারপ্রক্রিয়াকে বললেন প্রহসন

Share

হাসিনার ফাঁসির আদেশ ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’!

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে দেশ-বিদেশে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। রায় ঘোষণার আগে থেকেই বিচারকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ তুলছিলেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। রায় ঘোষণার পর সোমবার রাতে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এটি কোনও স্বাভাবিক বিচার নয়—এটি প্রকৃত অর্থেই ‘প্রতিশোধমূলক সাজা’, যেখানে ন্যায়-অন্যায়ের বিচার নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসাই চালিকাশক্তি।

হাসিনাকে গত বছর জুলাইয়ে ছাত্র–যুব বিক্ষোভ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগ ছিল, তিনি নাকি পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে। সেই মামলার রায় শোনায় ট্রাইব্যুনাল, যেখানে হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

আমেরিকা থেকে ‘ইন্ডিয়া টুডে’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, “এই রায় আগেই ঠিক ছিল। যে কেউ বুঝতে পারত—মায়ের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরিকল্পনা আগেই ছকে রাখা হয়েছিল। বিচারপর্বটি মাত্র ১০০-১৪০ দিনের মধ্যে শেষ করা হয়েছে। এত বড় মামলার বিচার এত তাড়াহুড়ো করে শেষ করার মানে কী? এর মধ্যে সুষ্ঠু বিচার কোথায়?”

তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি ‘অবৈধ ও অনির্বাচিত শাসনব্যবস্থা’। সংসদের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন আইন বদল করা হয়েছে, যা স্পষ্টতই সংবিধানবিরোধী। জয়ের তীব্র মন্তব্য, “একটি অগণতান্ত্রিক সরকার বিচারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে এমন রায় আসাই স্বাভাবিক।”

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি তিনি তোলেন আইনজীবী নিয়োগ নিয়ে। জয়ের দাবি, হাসিনাকে তাঁর পছন্দের আইনজীবী নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আদালতই তাঁর হয়ে আইনজীবী ঠিক করে দেয়। জয় বলেন, “অভিযুক্তের নিজের আইনজীবী বেছে নেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটি পুরোপুরি বিচারপ্রহসন। এমন বিচার কোনও গণতান্ত্রিক দেশে হয় না।”

এখানেই থামেননি জয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ‘আইনের শাসন’ বলে কিছু নেই। এ পরিস্থিতিতে আপিল করাও অর্থহীন। তাঁর মতে, দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে, বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হলে এই রায় বাতিল হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

জয়ের বক্তব্য, “এটি ন্যায়বিচারের জন্য মৃত্যুদণ্ড নয়। এটি আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সাজা।” তিনি অভিযোগ করেন, গত বছরের অশান্তির সময়ে আওয়ামী লীগের অসংখ্য কর্মীকে আটক করা হয়েছিল, বহু পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছিলেও সে সব মামলার কোনও অনুসন্ধান হয়নি। শুধু হাসিনা ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকার নাকি এমন একটি আইন পাশ করেছে, যাতে সরকারি পক্ষ বা নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে দায়মুক্তি দেওয়া হবে। তাঁর প্রশ্ন, “এক পক্ষ বিচার পাবে, অন্য পক্ষ পাবে না—এটাই কি ন্যায়বিচার?”

স্পষ্টত, জয়ের বক্তব্যে একটাই বার্তা—এ মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এবং রায়ও সেই রাজনীতিরই প্রতিফলন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন পথে এগোবে এবং এই রায় দেশে স্থিতাবস্থাকে কী ভাবে প্রভাবিত করবে—এখন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে সমগ্র উপমহাদেশ।

Read more

Local News