২০২৬-এর পর বদলাচ্ছে ‘লে ব্লু’-র হাল
ফুটবলবিশ্বে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে ফ্রান্স শিবিরে। দীর্ঘ দিন ধরে জাতীয় দলের হাল ধরে রাখা দিদিয়ের দেশঁ আগামী ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের পর আর দায়িত্বে থাকবেন না—এই ঘোষণা আসার পর থেকেই জল্পনা তুঙ্গে ছিল কে তবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন। সেই জল্পনায় এবার আরও রসদ যোগ করল ফরাসি সংবাদমাধ্যম। তাদের দাবি, দেশের পরবর্তী প্রধান কোচ হিসেবে প্রাথমিক চুক্তি সেরে ফেলেছেন কিংবদন্তি ফুটবলার জ়িনেদিন জ়িদান।
২০১২ সালে ফ্রান্স জাতীয় দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন দেশঁ। তাঁর হাত ধরেই ফ্রান্স ফুটবল দুনিয়ায় ফিরেছিল স্বর্ণযুগে। ২০১৮ বিশ্বকাপে ‘লে ব্লু’-দের শিরোপাজয়ের নেপথ্যে ছিল তাঁর কৌশলগত মস্তিষ্ক। এমনকি ২০১৬ ইউরোর ফাইনালে পৌঁছেও নজর কেড়েছিল তাঁর দল। তবে ২০২০ ইউরোতে শেষ ষোলোয় বিদায়—এই ওঠানামার মধ্যেও দেশঁ ছিলেন দলের মেরুদণ্ড। তবু ২০২৬-এর পর তিনি আর থাকবেন না—নিজেই জানিয়েছেন কয়েক মাস আগে।
এমন এক প্রেক্ষাপটেই সামনে আসছে জ়িদান-সম্ভাবনা। ফরাসি সংবাদমাধ্যমের একটি দাবি অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরে আলোচনা সেরে ফেলেছেন জ়িদান এবং ফরাসি ফুটবল ফেডারেশন। যদিও এখনো সরকারি ঘোষণা হয়নি। তবু ফুটবল মহল বলছে, জাতীয় দলের কোচ হওয়ার বিষয়ে তিনিই এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে।
জ়িদান ফুটবলের ইতিহাসে ‘অলটাইম গ্রেট’-দের তালিকায় অন্যতম। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ফ্রান্স যেদিন প্রথম ট্রফি জেতে, তার কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। জার্সিতে ‘১০’ নম্বরটি যেন এক জাদুর প্রতীক হয়ে উঠেছিল। শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, কোচ হিসেবেও জ়িনেদিন নিজেকে প্রমাণ করেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব নিয়ে তিনি দু’-দফা (২০১৬–২০১৮ এবং ২০১৯–২০২১) কোচিং করান এবং তোলেন একাধিক ট্রফি—বিশেষ করে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় তাঁর কোচিং দক্ষতার জীবন্ত উদাহরণ। কয়েক মাস আগেও সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেছিলেন, “খুব শীঘ্রই আমাকে আবার ম্যানেজারের ভূমিকায় দেখা যাবে।” কোন দলে? তা অবশ্য বলেননি।
ফরাসি দলে প্রজন্ম বদলের সময় এসে গিয়েছে—এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এমবাপ্পে, কোমান, চুয়ামেনি, কামাভিঙ্গারা—এই নতুন প্রতিভায় ভরপুর দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। জ়িদান সেই জায়গায় ‘পারফেক্ট ফিট’—অনেকে এমনটাই মনে করছেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে আরও এগিয়ে রেখেছে।
অন্য দিকে দেশঁও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। দীর্ঘ ১৪ বছরের পথচলায় দলকে স্থিতিশীলতা দিয়েছেন। কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চান বলেই মনে করা হচ্ছে। ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত সময় হাতে রয়েছে তাঁর। তার পরই হয়তো জ়িদানের যুগ শুরু হতে পারে।
তবে দেশঁ-পরবর্তী সময় যে সহজ হবে না, সেকথাও বলছেন অনেকে। ফরাসি দলকে ঘিরে স্টারডম, প্রত্যাশা, ফেডারেশনের চাপ—সবই রক্তচাপ বাড়ানোর মতো। তবুও জ়িদান নামটি এমনই যে তাঁর আগমন মানেই নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে বিশ্বাস ফুটবলদুনিয়ার।
ফরাসি ফেডারেশন অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি এখনও। তা সত্ত্বেও জল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছেন জ়িদান। দেশের ফুটবলপ্রেমীরাও অপেক্ষায়—তাদের ১৯৯৮-এর নায়ক কি এবার ২০২৬-এর পর ‘মাস্টারমাইন্ড’ হয়ে ফিরবেন?

