‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এ ঝড় থামছে না!
টেলিপাড়ায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ধারাবাহিকের দুই প্রধান অভিনেতা—জীতু কমল এবং দিতিপ্রিয়া রায়ের মধ্যে বেড়ে ওঠা অস্বস্তিকর সম্পর্ক। গত দু’দিন ধরে ধারাবাহিকের সেটে ঘটে চলা উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে তোলপাড় সমাজমাধ্যম। এমনকি, দর্শকদের একাংশ ‘বয়কট অপর্ণা’ স্লোগান তুলেছেন। কিন্তু এই কোলাহলের মাঝেই সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হল বহু প্রতীক্ষিত ‘মিটিং’। প্রধান লক্ষ্য ছিল—নায়ক–নায়িকার মধ্যে তৈরি হওয়া ভুল বোঝাবুঝি দূর করে কাজকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু বৈঠক শেষ হওয়ার পরেও স্পষ্ট হল—সমস্যা এখনও বাধাহীন নয়।
সোমবার ঠিক সন্ধ্যা ছ’টার সময় ধারাবাহিকের প্রযোজনা সংস্থার অফিসে হাজির হন জীতু, দিতিপ্রিয়া এবং তাঁদের নিজস্ব টিম সদস্যরা। শুরু হয় দীর্ঘ বৈঠক। সূত্রের খবর, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে এই বৈঠক। প্রযোজক–পরিচালকরা চেষ্টা করেছেন রাজ্যের জনপ্রিয় এই দুই অভিনেতাকে একই সুরে ফেরাতে। কিন্তু ফলাফল সন্তোষজনক নয়। কোনও সিদ্ধান্তই সুনির্দিষ্ট ভাবে চূড়ান্ত হয়নি।
শুটিংয়ের সেটে বারবার দেরিতে পৌঁছনো নিয়ে জীতুর ক্ষোভের জেরে যে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে, তার জেরেই নাকি নাটকীয় ভাবে তিনি শুটিং ফ্লোর ছেড়ে বেরিয়ে যান। এই ঘটনার ফলে অপমানিত বোধ করেন দিতিপ্রিয়া। শোনা যাচ্ছে, শুধু দেরিতে পৌঁছনো নয়, আরও কিছু দৃশ্য বিশেষ করে রোমান্টিক দৃশ্যে অভিনয় করতে দিতিপ্রিয়া প্রস্তুত ছিলেন না। এতে অস্বস্তিতে পড়েন সহ-অভিনেতা জীতু। এই অসঙ্গতি থেকেই ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব।
এই বিষয়গুলি নিয়েই সোমবার মুখোমুখি আলোচনা হয়। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন—দু’জনেই তাঁদের অবস্থান থেকে বিশেষ সরেননি। ফলে সমাধানসূত্র অধরাই রয়ে গেল। বৈঠক শেষে কোনও পক্ষই মিডিয়ার সামনে মুখ খুলতে চাননি।
এ দিকে, সমাজমাধ্যমে তুমুল প্রতিক্রিয়া। শনিবার রাতেই জীতু একটি পোস্ট করেন, যার কারণেই আলোড়ন বাড়ে। এর পর থেকেই ‘বয়কট অপর্ণা’ হ্যাশট্যাগ দেখা যাচ্ছে বহু মানুষের ওয়ালে। তবে দিতিপ্রিয়া এই বিষয়ে একেবারেই নীরব। বহু মন্তব্য, বার্তা আসলেও তিনি সেগুলোর উত্তর দিচ্ছেন না। জীতুও আর কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি।
এ দিন শুটিং পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ইউনিট সদস্যদের জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রধান দুই চরিত্রের দৃশ্যে কোনও কাজ হবে না। অন্য অভিনেতাদের মঙ্গলবারের ‘কল টাইম’ দেওয়া হলেও আর্য–অপর্ণার দৃশ্য রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনও তথ্য এখনো নেই। প্রযোজনা সংস্থার কাছ থেকে মঙ্গলবারই অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে।
টলিউডে অনেক সময়েই অভিনেতাদের ব্যক্তিগত সমস্যার প্রভাব পড়ে সিরিয়ালের গল্পে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও স্পর্শকাতর কারণ ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ বর্তমানে দর্শকমহলে যথেষ্ট জনপ্রিয়। গল্পের মুখ্য চরিত্রদের মধ্যে যদি সমন্বয় না-ই থাকে, তবে ধারাবাহিকের ভবিষ্যৎ সংকটে পড়তে পারে।
টেলিপাড়ার অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, দ্রুতই সমস্যার সমাধান না হলে প্রযোজনা সংস্থা বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে— হয় চরিত্র পরিবর্তন, নয়তো গল্পের মোড় বদল। তবে দর্শকের প্রত্যাশা স্পষ্ট—আর্য ও অপর্ণার জুটিকে তারা হারাতে চান না। এখন দেখার বিষয়, মঙ্গলবার প্রযোজনা সংস্থা কী ঘোষণা করে এবং শুটিং কবে স্বাভাবিক হয়।

